রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৪ ফাল্গুন ১৪৩১ , ১৭ শাবান ১৪৪৬

সাহিত্য
  >
গল্প

কবর থেকে এলাচের ঘ্রাণ ভেসে আসে

হেনরী লুইস আগস্ট ৫, ২০১৭, ১৬:৫৪:৪৩

9K
  • কবর থেকে এলাচের ঘ্রাণ ভেসে আসে

আমাদের কয়েক বাড়ির সামনে শৌল দাদার বাড়ি। বংশের কেউ না কিন্তু দাদা দাদা বলে ডাকি। শুনেছি লোকটা ছোটবেলায় আমাদের বাড়িতে রাখাল ছিল। কোনোদিন গাড়িতে না চড়ে দর্শনায় বোনের বাড়িতে হেঁটে হেঁটে অথবা ওপারে চাপড়ায় পালিয়ে যাওয়া বড় ছেলের বাড়িতে দুপুরের আগে পৌঁছে গেছে আবার সন্ধ্যার আগে বাড়িতে চলে এসেছে। তখন বুঝতাম না রতনপুর আর চাপড়া দুটো দেশের দুটো গ্রাম।

বিচিত্র পেশা তার। কখনো ছিপ দিয়ে মাছধরা, কখনো বাঁশের ঝুড়ি তৈরি করা, কখনো বিল থেকে কলমী শাক তুলে জগন্নাথপুর হাটে বিক্রি করা। আবার কার্তিক মাসের দিকে খোকন ঘরামীর আম বাগানের ভিতর বাইনে (আখ থেকে যেখানে গুড় তৈরি হয়) বাড়ুইগিরি। গুড় টগবগ টবগব করে ফুটছে। প্রায় শেষের দিকে। বিশালাকৃতির টিনের তাওয়া আমরা রেডি নতুন রস ঢালার সাথে সাথে ঝিলমিল তুলে নিতে হবে। জানি না এই ঝিলমিল থেকে পরে পৃথিবীতে চুইংগামের ধারণা এসেছে কিনা! বাইনে এখন আমাদের আখ মাড়াই চলছে অতএব, টিংকু আর আমার ক্ষমতা বেশি। পাড়ার অন্য ছেলেদের ভিড়তে দেওয়া যাবে না। আমরা রাজা রাজা ভাব নিয়ে ঘুরছি।

শৌল দাদা একমনে বাঁশের ঝুড়ি বুনাচ্ছে। পান চিবুচ্ছে। আলাদা কৌটায় রাখা এলাচ মাঝেমাঝে মুখে তুলে নিচ্ছে। পান আর এলাচের সংমিশ্রণে একটা অদ্ভুত সুগন্ধ আমাদের বিমোহিত করতো।

স্কুল থেকে ফিরে তাঁর আশেপাশে এই সুঘ্রাণের লোভে আমরা বসে থাকতাম আর এলাচের কৌটাটা সেসময় আমাদের কাছে ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে দামী জিনিস।

তাঁর তীব্র অভাব কেন জানি আজ ঐ ঘ্রাণের কাছে খুব ছোট ছিল বলে মনে হয়।

পুনরুত্থানের সন্ধ্যা। কবরগুলি সেজে উঠছে। হরেক রকম আগরবাতিকে ছাপিয়ে এলাচ আর পানের মিশ্রিত সুগন্ধ হঠাৎ বহুদিন পর আবার আমাকে আচ্ছাদিত করছে। বলতে পারেন এখানে শৌলদাদার কবরটি কোথায়?

নিউজজি/এসএফ

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন