শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ , ২০ শাওয়াল ১৪৪৬

সাহিত্য
  >
গল্প

ছোটগল্প ‘বিয়ের সানাই’

শাহানাজ পারভীন মার্চ ৩, ২০১৮, ১৩:৩৫:৩৩

3K
  • ছোটগল্প ‘বিয়ের সানাই’

সীমার আজ বিয়ে, সানাই বাজছে করুন সুরে! সে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না যে আজই তার বিয়ে, সে সেজে এসেছে, এক্ষুনি রওনা করবে কমিউনিটি সেন্টারের উদ্দেশ্যে! মন হারিয়ে যায় কদিন আগের ঘটনায়, মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগেই প্রস্তাব এসেছে পারিবারিক বন্ধুর মাধ্যমে। পাত্রকে মেডিক্যাল কলেজের ক্যাম্পাসে দূর থেকে দেখেই তার ভালো লেগেছে, দেখতে ভালো, লম্বা, স্নাতকোত্তর পড়াশুনা করছে- এরকমই তো সে চাচ্ছিল। ছোটকাল থেকেই স্বপ্ন দেখেছে স্বপ্নের রাজকুমার এসে তাকে জয় করে নিয়ে যাবে আর সুখে শান্তিতে বাস করবে সারাজীবন রাজকুমারীর মতই! একটু সিরিয়াস টাইপ মনে হলেও তার ধারণা ভালোবাসা  বিয়ের পরই ঘটে থাকে এবং ভদ্রলোকটি তাকে ভালোবাসতে বাধ্য হবে। তার পুরো সম্প্রসারিত পরিবারের সবাই তো তাকে পছন্দ করে তবে পাত্র রানা তাকে অপছন্দ করার কোনো কারণই নেই। একবারও দ্বিধা কাজ করেনি মনে যে, সীমা কথা বলবে পান-চিনির আগে। তার অটুট ধারণা, যেটা করে রেখেছেন উপরওয়ালা তা ঘটবেই। দেখা করতে গেছে পান-চিনির দুইদিন পর, যত্ন করে সেজেছে সীমা, বুকটা তার কাঁপছে দুরু-দুরু, রানা তাকে পছন্দ করবে তো? তাদের মধ্যে মানসিক যোগাযোগ হবে তো!

প্রথম কথা রানা বললো ‘শাড়ী পরে এসেছ কেন বলতো, লোকজন তাকিয়ে থাকবে?’ সীমা হতভম্ব হলেও সামলে নিলো নিজেকে; কেননা বিয়ের দুসপ্তাহের ও কম বাকী! এখন সে রানাকে না জানলে বিয়ে করবে কিভাবে? পার্কের মাটিতে বসে আলাপচারিতা শুরু করে তারা, মানে মূলত রানাই কথা বলতে থাকে। সে বলে যায় তার কথা, তার পরিবারের কথা, ভাই-বোন ও বাবা-মায়ের কথা কিন্তু সবচাইতে বেশি তার মায়ের কথা,। অনেকগুলো ভাইবোনদের মানুষ করতে তার মায়ের কষ্টের কথা। রানা এটাও বলতে বাদ দেয় না যে, সীমা বড়বৌ এবং বড়বৌ হিসাবে তাদের বাড়িতে সীমার দায়িত্ব হবে অনেক।

সীমা ঘাবড়ে গেলেও রানাকে তা বুঝতে দেয় না- বাড়ি ফিরে বাবা মাকে ও বুঝতে দেয় না সে। বাবা মা তাকে বড় আদরে মানুষ করেছেন, বড় করেছেন, পড়াশুনা করিয়েছেন, বিয়ে ঠিক করেছেন। শুধু তাই নয় সে অনেক বিয়ে নাকচ করেছে আগে, অতঃপর এই বিয়েতে রাজী হয়েছে নিজেই। আত্মীয়-স্বজনদের কাছে পাড়া-পড়শিদের কাছে সে মুখ দেখাবে কি করে এখন বিয়েটা না করলে, আর তার হয়তো বিয়ের প্রস্তাবই আর আসবে না! আর তাছাড়া মানুষটা কঠিন হলেও সে তো তাকে পরিবর্তন করতেই পারবে, ভালোবাসলেই রানাও তাকে ভালোবাসবে এবং তারা চিরসুখী হবে অবশ্যই। অনেক কান্নাকাটি আর চিন্তা ভাবনার পর সে বেরিয়ে আসে বাথরুম থেকে -মনস্থির তার, বিয়ে সে এখানেই করবে।

বাস্তবে ফিরে আসে সীমা বোনের কথায় ‘চলো যাই দেরী হয়ে গেছে তো’। সীমা অনেকটা দৌড়েই সিঁড়ি দিয়ে নামতে যায়, দেখে মিলন উঠে আসছে! মিলন মৃদু হেসে বলে ‘তুমি তো দেখি বিয়ে করার জন্যে পাগল হয়ে গেছো! বিয়ে তো হবেই, ধীরে সুস্থে যাও, পড়ে যেতে পারো সিঁড়িতে।’ 'হঠাৎই সে সীমার রেলিং এর উপর রাখা হাতের উপর হাত রাখে এই প্রথমবারের মত বলে- ‘সুখী হও আর ভাল থেকো সবসময়’।

 

 

নিউজজি/এসএফ

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন