শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৩ বৈশাখ ১৪৩২ , ২৭ শাওয়াল ১৪৪৬

সাহিত্য
  >
গল্প

জীবনের গল্প

হুমায়ূন কবীর ঢালী জুন ২৫, ২০১৮, ১৪:০৮:১৩

3K
  • জীবনের গল্প

ঘর পালানো ছেলে আমি। ১৯৮৫ সালে বাড়ি থেকে পালিয়ে চট্টগ্রাম গিয়েছিলাম। নতুন শহর। পরিচিত বলতে কেউ ছিল না। কী করি? ভাবলাম রাতটা কোনো মসজিদে কাটিয়ে সকালে উঠে দেখব কী করা যায়!
এই ভেবে চিটাগাং কলেজ মসজিদের এক কোণায় বসে আছি, এসময় একজন লোক এসে বলল, ছোট ভাই, আপনাকে তো চিনতে পারলাম না।
সামসু ভাইকে বললাম আমি পালিয়ে এসেছি। থাকার জায়গা নেই। 
সে আমাকে নিয়ে গেল তার বাসায়। বলল, আজ থেকে আমার বাড়িতে লজিং থাকবেন। আমার দুই ছেলেকে পড়াবেন। 
তার কথায় রাজি হয়ে গেলাম। চিটাগাং কলেজে অনার্সে ভর্তি হলাম। তার দুই ছেলেকে পড়াই। পাশাপাশি দুটো টিউশনি করি।
দিন যায়। 
এক বছর পর একদিন মসজিদে বসে আসর নামাজ পড়ছি। সালাম ফিরাতেই দেখি আমার বাঁ পাশে আব্বাও নামাজ পড়ছে।
সেদিনই আমাকে নিয়ে আব্বা বাড়িতে চলে এলেন।
 
দুই.
কর্মজীবনে ঢুকেছি। অফিসের কাজে একাধিকবার চিটাগাং গিয়েছি। একবার সামসু ভাইয়ের বাসা খোঁজও করেছি পাইনি। প্রতিবেশীরা বলেছে তারা এখান থেকে চলে গেছে।
 
তিন.
অনেকদিন পর তিন-চার দিন আগে চিটাগাং গিয়েছিলাম। অফিসের কাজে চকবাজার এলাকায় গিয়েছিলাম। হঠাৎ সামসু ভাইয়ের কথা মনে পড়ল। রিক্সা থেকে নেমে গেলাম। অনেক খোঁজাখুঁজির পর ঠিকানা পেলাম। এক মহিলা এগিয়ে এলেন। তিনি সামসু ভাইয়ের বউ। তাকে চিনতে পারলাম। কিন্তু তিনি আমাকে চিনতে পারলেন না। পরিচয় দেওয়ার পর চিনলেন। ঘরে নিয়ে বসালেন। আদর-আপ্যায়ন করলেন। সুখ-দুঃখের অনেক কথা বললেন। সামসু ভাইকে ফোন করে জানালেন আমার কথা।
 
চার.
আমি উঠে দাঁড়ালাম। 
আপা বললেন চলে যাচ্ছেন কেন? আসল কথা তো এখনো বলাই হয় নি।
বসলাম। আপা বললেন, ফেরদৌসীকে চেনেন?
না তো। কে?
ওই যে আপনি পড়াতেন। আমাদের প্রতিবেশী মেয়েটা। সেভেনে নাকি এইটে পড়ত।
ও আচ্ছা, মনে পড়েছে। নাম মনে ছিল না।
ফেরদৌসী যে মনে মনে আপনাকে ভালোবাসতো, তা তো আমরা জানতাম না। জানলাম ওর বিয়ে ঠিক হওয়ার পর। বিয়ে ঠিক হওয়ার পর ও এসে একদিন আমাকে বলল, আপনাকে নাকি ভালোবাসে। আমরা তো আর আপনার ঠিকানা জানি না। কী আর করা। ওর বাবা মা জোর করে ওকে বিয়ে দিয়ে দিলো।
স্বামীর ঘরেও মেয়েটা সুখী হতে পারল না। হবে কী করে ওর মনে যে আপনি বসে আছেন। যা হবার তাই হলো। স্বামীর ঘর ছেড়ে চলে এলো। এখন ও একা। চাকরি করে। ওর অনুরোধ, যদি কোনোদিন আপনি আসেন, আমি যেন ওর কথা বলি। ওর খুব ইচ্ছে আপনাকে দেখার। যাবেন নাকি ওর বাড়িতে? 
না, আপা আমার খুব তাড়া। আবার এলে যাবো।
তাহলে ওকে ডেকে নিয়ে আসি?
আজ সময় নেই একদম।
কথা শুনে আমার শরীর কাঁপতে শুরু করেছে। আপার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে দ্রুত চলে এলাম।
 
পাঁচ.
আসার পর মনে হলো আমি বোধহয় ভুল করেছি। ফেরদৌসীর সাথে দেখা করা উচিত ছিল।
 
 
 

নিউজজি/এসএফ

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন