শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ , ২০ শাওয়াল ১৪৪৬

সাহিত্য
  >
গল্প

বেহিসেবি জীবন

মিম্ মি অক্টোবর ৪, ২০১৮, ১১:৩০:০৫

3K
  • বেহিসেবি জীবন

ভার্সিটি শেষ করার প্রায় সাত বছর পর দেখা তোয়া আর নীলাদ্রির। ব্যাংকে এসেছিল তোয়া স্যালারি তুলতে। বরাবরের শান্ত, গম্ভীর, ভীতু তোয়া। হাজবেন্ড ডা. আশফাক মারা যাবার পরে নিজের ভেতরে আরো অনেকটা গুটিয়ে গিয়েছে। ব্যাংকে ওয়েটিং সোফাতে আলগোছে বসে ছিল সিরিয়ালে। ঈদের পর প্রথম ওয়ার্কিং ডে বলে প্রচুর ভীড় ছিল ঐদিন ব্যাংকে।

হঠাৎ করেই বহু বছর পরে ‘‘তোয়া কোয়া’ ডাকটা শুনতে পেলে কানে। ঘাড় ঘুরাতেই দেখল এত বছর বাদে এতটুকুও বদলে না যাওয়া নীল’কে। কোনো কিছু তোয়াক্কা না করে ধপাস করে তোয়ার পাশে বসে পড়ল নীল। তোয়ার অবাক দৃষ্টি উপেক্ষা করে বলল --লম্বা চুলে ভালো দেখাচ্ছে তোমাকে। একটু মোটা হয়েছ বলে এক ধরনের মায়া সৃষ্টি হয়েছে পুরো অবয়বে। 
 
ফিক করে হেসে ফেলে বলল তোয়া-তুমি একটুও বদলাওনি কেন?
 
কেন বদলাব? তুমি যেভাবে রেখে গিয়েছিলে ঠিক তেমনটাই আছি। শুধু মন দিয়ে অফিস করছি এটা যোগ হয়েছে নতুন। এখনো আগের মতোই দিনে এক প্যাকেট ধোঁয়া টানি, শুক্রবার সারাদিন ঘুমাই, রাতের পর রাত জেগে গেমস খেলি আর তোয়া কোয়াকে আগে মতোই মিস করি-বলল নীলাদ্রি।
 
এরপর স্বাভাবিক নিয়মেই মোবাইল নম্বর একচেইঞ্জ হলো দুজনের।
 
আশফাকের মৃত্যুর পর আশেপাশের সবার মুখোশহীন চেহারাটা দেখা হয় গেছে তোয়ার। এই সমাজে স্বামীহীন একজন মেয়েকে নিকট আত্মীয় থেকে শুরু করে বাবার বাড়ির পরিচিতজনেরা পর্যন্ত ইঙ্গিতপূর্ণ নক করতে ছাড়ে না জেনে গেছে তোয়া। নিজেরাই মেয়েটাকে অসহায় হিসেবে দেখতে চায় ! আহা উঁহু , কিছু লাগবে কিনা এসব বিশ্রী প্রশ্নে বন্দী করতে কি যে আনন্দ সবার !
আশফাক মারা যাবার পর প্রথম পাঁচ ছমাস এসব দেখতে দেখতে রীতিমতো অসুস্থ হয় পড়েছিল তোয়া।
 
এরপর চাকরি হলো চট্টগ্রামে একটা বোর্ডিং স্কুলে অনলের রেফারেন্সে। বাচ্চাকে নিয়ে মাথা গোঁজার একটা ঠাঁই পেল তোয়া। আর এত এত বাচ্চার হাসি মুখের মাঝে মাঝে নিজের কষ্টগুলো ভুলে থাকাটাও সহজ হলো যেন অনেকটা। বেঁচে গেল আরকি।
 
তোয়া আশফাকের বিয়ের সময় অনল দেশের বাইরে ছিল। আশফাকের মুখে দু একবার শুনেছিল ওর স্কুল বন্ধু অনলের কথা। রেসিডেন্সিয়াল স্কুল এন্ড কলেজে আশফাক আর অনল ছিল রুমমেট। সেই ক্লাস থ্রি থেকে ক্লাস এইট পর্যন্ত ওরা রুমমেট ছিল। এরপর ক্লাস নাইনে আশফাককে সাইন্স নেবার পরে রুম চেইঞ্জ করতে হয়। মধ্যবিত্ত পরিবারের বড় সন্তান যখন লেখাপড়াতে মেধাবী হয় তখন আমাদের দেশের প্রথা অনুযায়ী ঐ সন্তানের উপর চাপ থাকেই বড় হয় ডাক্তার/ ইঞ্জিনিয়ার তাকে হতেই হবে ! আশফাক তাই বইয়ে মুখ গুঁজে পড়া থাকতো সারাবেলা। আর 
অনল তখন ম্যাক্সিম গোর্কির মা থেকে চেগুয়েভারা হয়ে জাহানারা ইমামের একাত্তরের দিনগুলির রুমিতে আচ্ছন্ন। নজরুলের বিদ্রোহী যার পুরোটা ঠোঁটস্থ। অল্প স্বল্প মাঠ রাজনীতির দীক্ষা নিতে শুরু সেই তখন ই অনলের। 
 
বোর্ডিং স্কুলের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য অনল। আশফাকের বোন ফোনে অনলকে জানিয়েছিল তোয়ার ব্যাপারটা। তখন অনল বলেছিল-এই স্কুলে জয়েন করলে ওদের মা মেয়ের থাকার সমস্যার সমাধান হবে হয়তো। সেই সাথে আশফাকের মেয়েটার স্কুলিং নিয়েও ভাবতে হবে না। আর যেহেতু অনলের রেফারেন্স থাকবে অন্যরা কেউ তেমন ঘাটাবে না তোয়াকে। 
 
চাকরির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ইমেইলে অনলকে পাঠিয়েছিল তোয়া। সব কিছুর মধ্যস্থতা করছিল আশফাকের ছোট বোন। স্কুলে জয়েন করার ঠিক এগারো দিনের মাথায় তোয়াকে প্রথম ফোন করল অনল। 
 
আর তখন নিশ্চয়ই ঐ যে উপরে একজন আছেন সর্বশক্তিমান , তিনি মুচকি হেসে তোয়ার জীবন নামক রঙ্গ মঞ্চের নাটক মঞ্চস্থের আয়োজন করছিলেন। (চলবে...)
 
 
 
 
নিউজজি/এসএফ

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন