শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ , ২০ শাওয়াল ১৪৪৬

সাহিত্য
  >
গল্প

বেহিসেবি জীবন

মিম্ মি অক্টোবর ১১, ২০১৮, ১৩:৫৬:৩৬

6K
  • বেহিসেবি জীবন

ঘড়ির কাটার সোয়া আর পৌনে নিয়ে প্রতিবার অনলের গোলমাল বেঁধে যাওয়াটা খুব মজার লাগে তোয়ার। সকাল পৌনে সাতটায় অনলকে ‘শুভ সকাল’ বলে দিন শুরু করাটা এখন রোজকার রুটিন হয়ে গেছে তোয়ার। ফোন ধরে কয়টা বাজে জিজ্ঞেস করবে অনল। তোয়া বলবে-পৌনে সাতটা। অনল চমকে যাবে। ওর বিশাল বিশাল চোখ না খুলে কুঁচকে যাওয়া ভুরুজোড়া যেন কল্পনাতে দেখতে পায় তোয়া। 

পৌনে মানে যেন কি রোজ এই প্রশ্নটা করতেই হবে অনলকে।

গম্ভীর গলায় তোয়া বলবে -ছয়টা পঁয়তাল্লিশ। সাতটা পর্যন্ত তোমার সময়। যা যা বলতে চাও বলে ফেল। স্কুলে যাবার পর একদম সময় হবে না কথা বলার।

আড়মোড়া ভেঙে অনল বলে-

Early to bed and early to rise -তোমার এই ঘুম প্রীতি মনে হয় আমাকেও ইনফ্লুয়েন্স করতে শুরু করেছে বুঝলা তোয়াবিবি। আগে তো সারা রাত জেগে থেকেই কাজ করতাম। পড়তাম। লিখতাম। গান শুনতাম। সিগারেট ফুঁকতাম।আর ইদানিং রাত দুটোর পরে চোখ খোলা রাখাই দেখছি দায়। তোমার মতো সন্ধ্যে হলেই ঘুম পায় এখন। 

-হুমমমম আমি তো ছোঁয়াচে। 

-তাই? আরো ছোঁয়াচ দাও তাহলে।

-সহ্য হবে তো?

-খুব হবে। 

-এই তুমি সিগারেট খাচ্ছ কেন? বলছি না এসব বিশ্রী জিনিস খাবার সময়ে আমার সাথে কথা বলবা না।

-আরে কই সিগারেট খাচ্ছি? মনে আছে সিগারেটের ধোঁয়া তোমার সহ্য হয় না। বাস্তবেও না, ফোনেও না। ইথারের মধ্যে দিয়ে তুমি গন্ধ পাও। কি স্পেশাল নাক তোমার।হিহিহি।

-উফফফফফ সহ্য হচ্ছে না কিন্তু সমুদ্র তোমারে আমার।

-আচ্ছা শোন তুমি আমাকে সমুদ্র বলে ডাকো কেন? 

-উমমম, তোমার ভেতরে মন কেমন করা উচ্ছ্বাস, হৈচৈ,চঞ্চলতা,এলোমেলো,ভাঙচুর একটা ব্যাপার আছে। পুরো আমার বিপরীত।

পাশাপাশি খুব সফট,শান্ত,আবেগিক ,ছেলে মানুষীও আছে।

অনেকটা জোয়ার ভাটার মতো।  একই সাথে শান্ত আবার অশান্ত।

একটা বিশালতা টাইপ ব্যাপার আছে। তবে এলোমেলো ভাবটা বেশি বলে গোছানো ব্যাপারটা কম। সমুদ্রের সাথে মিল পাই তোমার। 

-বাপরে তুমি দেখি রোমান্টিক হচ্ছ আজকাল।

-হাসিস কেন শয়তান… সমুদ্র?

-তোকে খুব ভালোবাসি রে।

এরপর আর কোন সাড়াশব্দ নেই কয়েক সেকেন্ড। দু প্রান্তে দুজন যার যার ল্যাপটপের স্ক্রিনে আলতো করে হাত বুলিয়ে যাওয়া দুজনের। টিট্ টিট্ টিট্ শব্দে তোয়ার বেড সাইডের টেবিলে রাখা ঘড়িটা জানান দিল সাতটা বাজে। এখনই বিছানা ছাড়তে হবে। শাওয়ার নিয়ে , রেডি হয়ে আটটার মধ্যে ব্রেকফার্ষ্ট শেষ করে ছুটতে হবে স্কুলে। শেষ কয়েক সেকেন্ড নিঃশব্দ থাকে অনল আর তোয়া। যেন শব্দহীন মানব মানবী গভীরভাবে পরস্পরকে অনুভব করে। ভালোবাসার মোড়কে দূরত্ব কে ছুঁয়ে দেবার চেষ্টা আরকি।

স্কুল জীবন থেকেই রাজনীতির দীক্ষা নেয়া অনলকে বেঁধে রাখার সাধ্য হয়নি কোন নারীর এই দীর্ঘ জীবনে। কলেজে থাকার সময়ে পত্র-মিতালীতে প্রেম এসেছিল জীবনে প্রথম। ইয়োকি নামের চ্যাপ্টা নাকের পুতুল পুতুল দেখতে এক জাপানি মেয়ে ছিল অনলের পত্রমিতা। ভার্সিটিতে ওঠার পর রাজনীতিতে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে পরা অনলের জীবনে নারীর আনাগোনা ছিল অনেকটাই ধোঁয়াশার মতো। ইয়োকির সাথে দেখা করার জন্য জাপান পর্যন্ত গিয়েছিল অনল।

পরিচিত অনেকেরই ধারনা জাপানে যে আড়াই বছর অনল ছিল তখন ইয়োকিকে বিয়েও করেছিল সে। এমনকি তাদের নাকি একটা বাচ্চাও আছে ! যদিও কখনো কাউকে সরাসরি এই ইস্যু নিয়ে কিছু জানায়নি অনল। 

তোয়া জবে ঢোকার এগারোতম দিনে অনল প্রথম ফোন করেছিল তোয়াকে খোঁজ খবর নেবার জন্য। প্রয়াত বন্ধুর স্ত্রী আর বাচ্চার প্রতি যতটুকু ভদ্রতা দেখানো দরকার ততটুকুই দেখিয়েছিল অনল। 

এর দুদিন পর তোয়া জবের ব্যাপারে সাহায্য করার জন্য সৌজন্য ধন্যবাদ দেবার জন্য পাল্টা ফোন দিয়েছিল অনলকে। সেই থেকে কথোপকথনের শুরু। এত ফর্মাল ছিল শুরুটা যে ভুল করেও তোয়া বা অনল কারো মাথায় আসেনি যে ওরা দুজন দুজনের অভ্যাস হয়ে যেতে পারে। রক্তে মিশে যাবার মতো নেশা হতে পারে তাদের মাঝে।

কিন্তু বিধাতা হয়তো তেমনটাই চেয়েছিলেন !

দীর্ঘ দিন একা জীবন কাটানো দুজন পূর্ণাঙ্গ মানব মানবী কে কাছে আসার সুযোগ দিয়ে হয়তো তিনি অপেক্ষায় ছিলেন ওরা কখন কোন মুহূর্ত থেকে 

পরস্পর পরস্পরের উপর নিজেদের অলক্ষ্যে মায়ার টানে আটকে যেতে থাকে। আর অলক্ষ্যে থেকে তিনি মুচকি হেসে যাবেন।

মাইরি বিধাতা তুমি বড়ই রসিক আছ..... (চলবে)

নিউজজি/এসএফ

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন