শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২ , ২০ শাওয়াল ১৪৪৬

সাহিত্য
  >
গল্প

বেহিসেবি জীবন

মিম্ মি নভেম্বর ১৫, ২০১৮, ১১:২৫:০৪

3K
  • বেহিসেবি জীবন

(শেষ পর্ব)

এক মাস হয়ে গেল তোয়া আর্শিকে নিয়ে ওর মায়ের বাড়িতে এসে উঠেছে স্কুলের জবটা ছেড়ে। এখন পর্যন্ত কোন খবর নেই অনলের। তোয়া জানে না কিভাবে দিন কেটে যাচ্ছে। 

আর্শিকে নতুন স্কুলে ভর্তি করতে হবে সেজন্য টাকা তুলতে ব্যাঙ্কে এসেছিল। আর সেখানেই দেখা নীলাদ্রির সাথে দীর্ঘ সাত বছর পরে। 

তিন দিন পরে নীলাদ্রি ফোন দিল তোয়াকে। দেখা করতে চাইলো। তোয়া জানাল ও খুব ঝামেলার মধ্যে আছে। জব খুঁজছে। মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করতে হবে। এখন দেখা করার সময় নেই। নীলাদ্রী বলল- এ আর নতুন কি? আমার জন্য কখনোই তোমার সময় ছিল না। তুমি বললে আমি তোমার বাসায় আসতে পারি।

তোয়া বিরক্ত হয়ে বলল-বাসায় কেন আসবে? আচ্ছা যাও বিকেলে বসুন্ধরা সিটিতে আস।

নির্দিষ্ট সময়ের আগেই হাজির হলো নীলাদ্রি একগুচ্ছ লাল গোলাপ নিয়ে। তোয়ার আসতে মিনিট দশেক দেরী হলো। গোলাপ দেখে বলল-এসবের মানে কি নীল?

-মানে তোমাকে এবার ফর্মাল ওয়েতে প্রপোজ করতে চাই। একবার হারিয়েছি আর হারাতে পারব না তোমাকে।

-নীল আমার এমনিতেই মন মেজাজ ভালো নেই। নানা যন্ত্রণাতে আছি।তোমার এসব কথা আমার কাছে খুব বিরক্তিকর লাগছে। 

-কেন? আমি তোমার বিয়ের পরে কখনো নক করেছি তোমাকে?যোগাযোগের কোন চেষ্টা করেছি বল? আজ যখন প্রকৃতি আমাকে আবার তোমার কাছাকাছি হবার একটা সুযোগ দিচ্ছে আমি কেননা নিব না?

লম্বা দম টেনে চোখ বন্ধ করে বলে তোয়া। কারণ আশফাক মারা যাবার পরে আরো দুবছর কেটে গেছে। দুবছর লম্বা সময় নীল। জীবনে অনেক কিছু ঘটার জন্য। 

-কি ঘটেছে এ দুবছরে। বল।

চুপ করে থাকল তোয়া মিনিট পাঁচেক। 

-অন্য কেউ এসেছে আমার জীবনে। 

-হোয়াট ! কিভাবে সম্ভব?

-কিভাবে মানে? আসতে পারে না?

-হুম তা পারে। 

তোয়ার চোখ জ্বালা করে উঠলো। 

আলতো করে টেবিলে রাখা তোয়ার হাতটা ধরল নীলাদ্রী। কাঁদছ কেন? হুম অন্য কেউ আসতেই পারে। কি হয়েছে বল তো। 

একটু ধাতস্থ হয়ে গত এক মাস ধরে একা বয়ে বেড়ানো দম বন্ধ করা কান্নাগুলো ঝরতে থাকল তোয়ার। এত বছর পর সব থেকে কাছের বন্ধুটাকে পেয়ে। ওর আর অনলের সব কথা খুলে বলল নীলকে।

সব শুনে নীল কিছুটা হতবিহ্বল হয় পড়লেও নিজেকে সামলে নিয়ে বলল চল তোমাকে বাসায় পৌঁছে দিচ্ছি।

সপ্তাহখানেক পর নীল তোয়াকে ফোন দিল। জানতে চাইল অনলের কোন খোঁজ পেয়েছে কিনা? তারপর বলল--দেখ তোয়া আমি খুব ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করে দেখলাম এই পৃথিবীতে কারণ ছাড়া কোন কিছু ঘটে না। এত বছর পরে তোমার সাথে আমার এই দেখা হওয়ার পেছনেও নিশ্চয়ই কোন কারণ আছে। আমি সেটা জানতে চাই।

তোয়া- তা সম্ভব না। আমার পক্ষে অনলকে ছাড়া আর কিছুই ভাবা সম্ভব না।

নীল- সে স্টিল নাও ট্রেসলেস। আর এটার মানে নিশ্চয়ই তুমি বোঝ।

তোয়া-হুম বুঝি। বুঝি বলেই বলছি আমি ওর জন্য অপেক্ষা করব। যতদিন লাগুক। 

নীল- বি প্রাক্টিক্যাল তোয়া। গুম হওয়া অনেকেই আর কখনো ফিরে আসেনি।

তোয়া- অনল আসবে।

নীল- উফফফফফফ। ওকে ফাইন। তাহলে বল এখানে আমার দোষটা কি? আমিই কেন হব সময় সাফার করব?

তোয়া-জানি না।

নীল- ওকে। তাহলে শোন আমি তোমাকে এবার আর হারাতে পারব না। আমি তোমার সাথে থাকতে চাই। তোমাকে ছাড়া আমি ভালো ছিলাম না তোয়া। প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দিও না। কোন না কোন ভাবে আমাকে তোমার জীবনে রেখে দাও। প্লিজ।

তোয়া দাঁত দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরা কান্না গিলে বলল --দুজনকে যে একসাথে ভালোবাসা যায় না নীল..... আমার সাথেই কেন এমন হয় বলতে পার?

নীল- কেন যাবে না? খুব যাবে। তুমি যদি একসাথে দুজনকে মেন্টেইন করতে পার আমার কোন সমস্যা নেই। তবুও আমি চাই তোমাকে।

তোয়া- পাগল হয় গেলে নীল??

নীল- হুম ধর তাই। 

মাস তিনেক পরে জানা গেল রূপপুর কারাগারে বন্দি ছিল অনল। সামনের সপ্তাহে কোর্টে তোলা হবে ওকে। জামিন হয় যাবে ঐদিন ওর। 

আজ সাদা রঙ্গের ময়ূরাক্ষী শাড়ি পরে খোলা চুলে কপালে ছোট একটা কালো টিপ এঁকে অনলের সাথে

দেখা করতে যাচ্ছে তোয়া। আজ ওর জামিন হবে।

তোয়াকে সাথে করে নিয়ে যাচ্ছে নীলাদ্রি। 

তোয়া জানে না অনলকে সে কেমন দেখবে? অনলকে সে নীলের কথা কি বলবে? অনলও কি নীলের মতো করে বলবে তুমি যদি দুজনকে মেন্টেইন করতে পার..... নাকি খুব ক্ষেপে যাবে? নীলে’রই বা কি রিয়াকশন হবে ওদের দুজনকে একসাথে দেখে। 

হঠাৎ ভীষণ তির্যক হাসি পেল তোয়ার বিধাতার উপরে। মনে মনে বলল- আর কত? শেষ পর্যন্ত কি হবে বিধাতা? আর কত আমাক নিয়ে পরীক্ষা চলবে আপনার? আমার কিন্তু আজ এতটুকুও মন খারাপ লাগছে না। কারণ আজ অবশ্যই আপনাকে শেষ দানটা চলাতেই হবে। সো উইশ ইউ গুড লাক বিধাতা। মনে মনে এতটুকু বলে হঠাৎ চোখের কোন মুছে সশব্দে হেসে উঠলো তোয়া। 

*** সমাপ্ত ***

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন