‘শুধু বিনোদনই নয়, নৃত্য এখন জীবনের প্রতিচ্ছবি’

ঢাকা: ‘বিশ্ব নাচে ছন্দময়, আসবে শান্তি কাটবে ভয়’ এ প্রতিপাদ্যে সোমবার ২৯ এপ্রিল দেশব্যাপী আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস উদযাপন করেন বাংলাদেশের নৃত্যশিল্পীরা। ব্যালে নৃত্যের স্রষ্টা জ্যঁ জস নুভেরের জন্মদিন ২৯ এপ্রিল। এই শিল্পীকে শ্রদ্ধা জানাতে ১৯৮২ সালে ইউনেসকো ২৯ এপ্রিলকে আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস হিসেবে নির্ধারণ করে। বাংলাদেশে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে ১৯৯৫ সাল থেকে। এ বছর আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবসের বাণী রচনা করেছেন আর্জেন্টাইন ব্যালে নৃত্যশিল্পী মারিয়া নেনানুসিস।

এদিন সন্ধ্যায় রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস অনুষ্ঠানে আলোচনায় সংস্কৃতিজনরা বলেন মুক্ত বুদ্ধি ও চিন্তার রাজ্যে প্রবেশ করার পথ খুঁজে নেয়ার ক্ষেত্রে শিল্পকলার নানা আঙ্গিকের একটি হচ্ছে নৃত্যকলা। নৃত্যশিল্প চর্চার মধ্য দিয়ে পরিশুদ্ধ ও আলোকিত হয় অন্তর্লোক। অভিনেতা ও নৃত্যশিল্পীদের ভাষ্যে, মহিমান্বিত শিল্পমাধ্যম নৃত্য আজ শুধু বিনোদনই নয়, নৃত্য এখন জীবনের প্রতিচ্ছবি।

এ সময় বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থার আয়োজনে বিশেষ অতিথি ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সংস্কৃতিজন নাসিরউদ্দীন ইউসুফ, ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক আবদুস সেলিম, একুশে পদকপ্রাপ্ত নৃত্যশিল্পী মুনমুন আহমেদ ও শিবলী মোহাম্মদ। অনুষ্ঠানে নৃত্যগুরু শামীম আরা নীপাকে সম্মাননা জানায় বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থা। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মীনু হক।

বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মীনু হক বলেন, ‘নৃত্যশিল্প চর্চার মধ্য দিয়ে পরিশুদ্ধ ও আলোকিত হয় আমাদের অন্তর্লোক, মুক্ত বুদ্ধি ও চিন্তার রাজ্যে প্রবেশ করার পথ খুঁজে পায় আমাদের চিত্তলোক। নৃত্যকলা মহিমান্বিত একটি শিল্পমাধ্যম। নৃত্য আজ শুধু বিনোদন নয়, নৃত্য জীবনের প্রতিচ্ছবি। নৃত্যের উপস্থাপনা অনেক বেশি মাত্রায় জীবনঘনিষ্ঠ।’

বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থা গত ২৩ এপ্রিল থেকে এবারের আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবসের আয়োজন শুরু করেছে। আয়োজনের মধ্যে সপ্তাহব্যাপী মেলা ও নৃত্যানুষ্ঠান, নৃত্য কর্মশালা, নৃত্যবিষয়ক সেমিনার ছিল।

আলোচনা অনুষ্ঠানের পর মুনমুন আহমেদের পরিচালনায় রেওয়াজ পারফরমার্স একাডেমি, তামান্না রহমানের পরিচালনায় নৃত্যম নৃত্যশীলন কেন্দ্র, সাজু আহমেদের পরিচালনায় কথক নৃত্য সম্প্রদায়, সামিনা হোসেন প্রেমার পরিচালনায় ভাবনা, র‌্যাচেল প্রিয়াংকা প্যারিসের পরিচালনায় বাংলাদেশ গৌড়ীয় নৃত্য একাডেমির শিল্পীরা নৃত্য পরিবেশন করেন। নৃত্য পরিবেশনা পর্বে অংশ নেয় অনীক বোসের স্পন্দন, সেলিনা হকের দল নৃত্যসুর, ওয়াহিদ পারভিন অলিভের নৃত্য রং, আনসার ড্যান্স একাডেমি, ফাতেমা কাসেমের ঝংকার ললিতকলা একাডেমি, মো. মাসুদ রানার পরিচালনায় বাংলাদেশ পুলিশ থিয়েটার অ্যান্ড কালচারাল ক্লাব, শরীফ মিয়ার পরিচালনায় সৃষ্টিশীল একাডেমি, আরিফ হোসেন শামীমের পরিচালনায় নবরস, ফারহানা চৌধুরী বেবীর পরিচালনায় বাংলাদেশ একাডেমি অব ফাইন আর্টস, এম আর ওয়াসেকের পরিচালনায় নন্দন কলাকেন্দ্র, জুয়াইরিয়া মৌলি ও হাসান ইশতিয়াক ইমরানের পরিচালনায় ক্যাথাকিয়া, গোলাম মোস্তফা ববির পরিচালনায় নৃত্যবৃতি, অন্তর সরকারের পরিচালনায় কালারস অব হিল, এমদাদুল হক মিলনের পরিচালনায় হৃদমিক ড্যান্স সেন্টার, বেনজির সালামের পরিচালনায় নৃত্যছন্দ, প্রান্তিক দেবের পরিচালনায় দেব ড্যান্স একাডেমি।

একই দিনে ঢাকার জাতীয় জাদুঘরের বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মিলনায়তনে নৃত্যশিল্পী ফাউন্ডেশনের উদ্যোগেও আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস উদযাপিত হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকেলে জাতীয় জাদুঘর প্রাঙ্গণে পতাকা উত্তোলনের পর শাহবাগে শোভাযাত্রা বের করেন নৃত্যশিল্পীরা। আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, শিক্ষাবিদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. নাসরীন আহমেদ, ইউনেসকো ঢাকা অফিসের ইনচার্জ ড. সুসান ভাইজ।

পরে সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সদস্যরা প্রথমে নৃত্য পরিবেশন করেন। পরে কল্পতরু, ভঙ্গিমা ড্যান্স একাডেমি, সোহাগ ড্যান্স গ্রুপ, ভারতের সুমন মণ্ডল, বাফা, সম্পূর্ণকলা একাডেমি, ঘুঙুর একাডেমির সদস্যরা নৃত্য পরিবেশন করেন।

নিউজজি/এস দত্ত