শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ , ৯ জিলকদ ১৪৪৫

বিনোদন

সুধীন দাশ: বাংলা গানের ইতিহাসে যার অবদান চিরস্মরণীয়

সুমিত দত্ত  এপ্রিল ৩০, ২০২৪, ০১:০৯:৩২

50
  • সুধীন দাশ: বাংলা গানের ইতিহাসে যার অবদান চিরস্মরণীয়

তার সম্পর্কে বলা যায়- ‘শক্তির পেছনে রুধির ধারার মতো’। সারাজীবন কাটিয়ে দিয়েছেন বাংলা গানকে গতিশীল আর সমৃদ্ধ করার কাজে। কিন্তু থেকেছেন একেবারে সাদামাটাভাবে, অনেকটা অন্তরালেই। তিনি সুধীন দাশ। দেশের সঙ্গীত ইতিহাসে তার অবদান সগর্বে স্বীকার করার মতো।

আজ ৩০ এপ্রিল সুধীন দাশের জন্মদিন। ১৯৩০ সালে কুমিল্লা শহরের তালপুকুরপাড়ের বাগিচাগাঁওয়ে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তিন বোন আর ছয় ভাইয়ের পর মায়ের কোলজুড়ে এসেছিলেন সুধীন দাশ। তার বাবা নিশিকান্ত দাশ ও মা হেমপ্রভা দাশ।

সুধীন দাশের পড়াশোনার প্রথম হাতেখড়ি হয়েছিল বামচন্দ্র পাঠশালায়। এরপর তৃতীয় শ্রেণিতে উঠে চলে যান ঈশ্বর পাঠশালায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোলে সেই পাঠশালাটা বন্ধ হয়ে যায়। কুমিল্লা জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে ভর্তি হই ভিক্টোরিয়া কলেজে। এই কলেজ থেকে বিএ পরীক্ষার আগ মুহূর্তে তিনি পুরোপুরি ঝুঁকে পড়েন সঙ্গীতে। এরপর সঙ্গীতেই কাটিয়ে দেন সারাটা জীবন।

সুধীন দাশের গানের অনুপ্রেরণা কিংবা প্রথম সঙ্গীতগুরু তারই বড় ভাই প্রয়াত সুরেন দাশ। প্রথম প্রথম সুধীনকে গান শেখাতে চাইতেন না তিনি। কেননা, তার কথা ছিল- আগে পড়ালেখা তারপর অন্য কিছু। তখন সুরেন দাশ ছেলে-মেয়েদের গান শেখাতেন, আর ঘরের পেছনে দাঁড়িয়ে শুনতেন সুধীন। সব শুনে ফাঁক পেলেই মাঠে গিয়ে নিজে নিজে রেওয়াজ করতেন। পরে দীর্ঘদিন বড় ভাইয়ের কাছে উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের তালিম নিয়েছিলেন সুধীন।

একটা সময় নিয়মিত বেতারে গাইতে শুরু করলেন সুধীন দাশ। মাসে চার দিন গাওয়ার সুযোগ পেতেন। সে সময় বেতারে শিল্পীর পাশাপাশি সুরকারেরও বেশ শূন্যতা। তাই সুরকার হিসেবেও চাহিদা বেড়ে গেল তার। নজরুল অসুস্থ থাকাকালীন তার গানের প্রচার-প্রসার পুরোপুরি বন্ধ ছিল। নজরুল সঙ্গীতের অন্ধকার সময় বলা যায় সে সময়টাকে। সে সময় নজরুলের গান বেশ দুর্লভ হয়ে পড়ে।

ছেলেবেলা থেকে নজরুলের গানের আদি গ্রামোফোন রেকর্ড শুনে শুনে নজরুল সঙ্গীত আত্মস্থ করেছিলেন সুধীন দাশ। ১৯৮২ সালের জানুয়ারি মাসে তার ২৫টি স্বরলিপি নিয়ে নজরুল সুরলিপির প্রথম খণ্ডটি প্রকাশ করে নজরুল একাডেমি। এটি প্রকাশের পরপরই ব্যাপক সাড়া পড়ে যায় চারপাশে।

এরপর সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্থাপিত হয় নজরুল ইনস্টিটিউট। এ পর্যন্ত ৩৩ খণ্ড নজরুল সুরলিপি বেরিয়েছে সেখান থেকে। যার মধ্যে ২০টির প্রচ্ছদে স্বরলিপিকারের নামের জায়গায় সযত্নে লেখা হয়েছে সুধীন দাশের নামটি। শুধু স্বরলিপিকারই নন, নজরুল ইনস্টিটিউটে সংরক্ষিত আদি গ্রামোফোন রেকর্ড থেকে সিডি তৈরির ব্যাপারেও বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন সুধীন। লালনের কিছু গানেরও স্বরলিপি করে বই আকারে প্রকাশ করেছিলেন তিনি।

সঙ্গীতে অসামান্য অবদান রাখার সুবাদে সুধীন দাশ বেশ কিছু পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছিলেন। ১৯৮৮ সালে তিনি লাভ করেন রাষ্ট্রীয় সম্মাননা একুশে পদক। ২০১০ সালে পান মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার আজীবন সম্মাননা। এছাড়াও নাসিরউদ্দিন স্বর্ণপদক, সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডসও অর্জন করেছিলেন তিনি।

দীর্ঘ দিন বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগে ২০১৭ সালের ২৭ জুন না ফেরার দেশে চলে যান সুধীন দাশ। তার প্রয়াণে বাংলা গান কেবল একজন সঙ্গীতজ্ঞকে হারায়নি, হারিয়েছে একটি প্রতিষ্ঠানকে।

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন