বুধবার, ২২ মে ২০২৪, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ , ১৪ জিলকদ ১৪৪৫

বিনোদন

মান্না দে: সঙ্গীতাকাশের অবিস্মরণীয় নক্ষত্র

নিউজজি প্রতিবেদক  মে ১, ২০২৪, ০০:৩৩:৪৭

63
  • মান্না দে: সঙ্গীতাকাশের অবিস্মরণীয় নক্ষত্র

ভারতীয় সঙ্গীতের অন্যতম সেরা ও সফল সঙ্গীতশিল্পী মান্না দে। তাকে বিবেচনা করা হয় সর্বকালের সেরাদের একজন হিসেবে। বাণিজ্যিক সিনেমায় ক্লাসিক্যাল গানের প্রচলনে তার আকাশচুম্বী সাফল্য বিস্ময়কর বটে। হিন্দি, বাংলাসহ অন্তত ২৪টি ভাষায় গান করেছেন কিংবদন্তি এই শিল্পী।

আজ ১ মে মান্না দে’র জন্মদিন। ১৯১৯ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি। কলকাতায় তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। তার আসল নাম প্রবোধ চন্দ্র দে। তার চাচা ছিলেন প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ কৃষ্ণ চন্দ্র দে বা কে সি রায়। মাত্র ১০ বছর বয়স থেকে মান্না দে স্টেজে গান করা শুরু করেন। তবে পড়াশোনায়ও সমান মনোযোগী ছিলেন তিনি। বিদ্যাসাগর কলেজ থেকে মান্না দে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন।

১৯৪২ সালের কথা। চাচা কে সি রায়ের সঙ্গে বোম্বে যান মান্না দে। তার সঙ্গে সহকারী হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। এরপর আরেক কিংবদন্তি সঙ্গীতজ্ঞ সচীন দেব বর্মণের সহকারী হিসেবেও কাজ করেন মান্না দে।

প্লেব্যাক গায়ক হিসেবে মান্না দে’র অভিষেক হয় তার বোম্বে আসার বছরই। চাচার সুর-সঙ্গীতে তিনি ‘তামান্না’ সিনেমায় ‘জাগো আয়ে ঊষা পঞ্চি বোলে জাগো’ শিরোনামের গানটি তৎকালীন জনপ্রিয় গায়িকা সুরাইয়ার সঙ্গে দ্বৈতভাবে গেয়েছিলেন। শুরুতেই বাজিমাৎ। গানটি তখন রাতারাতি জনপ্রিয়তা পেয়ে যায়। এর এক বছর পর ১৯৪৩ সালে একক কণ্ঠে হাজির হন মান্না দে। ‘রাম রাজ্য’ সিনেমায় ‘গায়ি তু গায়ি সীতা সাতি’ শিরোনামের একটি গান করেন তিনি।

পঞ্চাশের দশকে ভারতজুড়ে তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করেন মান্না দে। তার কণ্ঠ ছড়িয়ে যায় চারদিকে। ১৯৫৩ সালে ‘দো বিঘা জমিন’ সিনেমায় সলিল চৌধু্রীর সুরে দুটি গান করেন তিনি। দুটি গানই ব্যাপক শ্রোতাপ্রিয়তা পায়। এরপর সলিল ও মান্না দু’জনের দারুণ জুটি গড়ে ওঠে। ১৯৯২ সাল পর্যন্ত তারা একসঙ্গে বহু গান উপহার দিয়েছেন।

ষাট ও সত্তরের দশককে বলা হয় মান্না দে’র ক্যারিয়ারের সবচেয়ে সফল সময়। এই দুই দশকে তিনি অসংখ্য শ্রোতানন্দিত গান গেয়েছেন। অবশ্য আশি এবং নব্বই দশকে এসেও তিনি নিজের সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছিলেন। হিন্দি সিনেমার চেয়ে তখন বাংলা ও অন্যান্য ভাষার সিনেমায় অধিক সাফল্য পেয়েছিলেন তিনি।

মান্না দে’র গাওয়া কালজয়ী হিন্দি গানগুলোর মধ্যে ‘জিন্দেগি ক্যায়সি হ্যায় পেহেলি’, ‘ইয়ে রাত ভিগি ভিগি’, ‘এ ভাই যারা দেখ কে চালো’, ‘তু পেয়ার কা সাগার হ্যায়’, ‘অ্যায় মেরি জোহরা যাবিন’, ‘কাসমে ওয়াদে পার ওয়াফা’, ‘লাগা চুনারি মে দাগ’, ‘তুম বিন জীবান’, ‘সুর না সাজে’, ‘ইয়ে হ্যায় ইমান মেরা’, ‘আজা সানাম মধুর চান্দানি’, ‘না মাঙ্গো সোনা চান্দি’, ‘দিল কা হাল সুনে দিলওয়ালা’, ‘অ্যায় মেরে পেয়ারে ওয়াতান’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

এছাড়া বাংলা ভাষায় মান্না দে’র গাওয়া অসংখ্য শ্রোতানন্দিত ও কালজয়ী গান রয়েছে। লম্বা সেই তালিকার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ‘এই কুলে আমি ওই কুলে তুমি’, ‘আমি নিরালায় বসে’, ‘ও চাঁদ সামলে রাখো’, ‘আমার ভালোবাসার রাজপ্রাসাদে’, ‘দরদি গো কী চেয়েছি’, ‘শাওন রাতে যদি’, ‘আমার মন যমুনার’, ‘যখন কেউ আমাকে পাগল বলে’, ‘বড় একা লাগে’, ‘কফি হাউজের সেই আড্ডাটা’, ‘কী দেখলে তুমি আমাতে’, ‘কে তুমি তন্দ্রাহরণী’, ‘সুন্দরী গো দোহাই দোহাই’, ‘এসেছি আমি এসেছি’, ‘বাজে গো বীণা’, ‘তুমি নিজের মুখেই বললে’, ‘ক ফোঁটা চোখের জল’, ‘আবার হবে তো দেখা’, ‘ভালোবাসার আগুণ জ্বালাও’, ‘যদি কাগজে লেখো নাম’, ‘কতদিন দেখিনি তোমায়’, ‘এইতো বেশ আছি’, ‘আমি তার ঠিকানা রাখিনি’, ‘না যেও না’, ‘তুমি অনেক যত্ন করে’, ‘জানি তোমার প্রেমের যোগ্য’, ‘খুব জানতে ইচ্ছে করে’ ইত্যাদি।

ক্যারিয়ারের প্রথম প্রান্তেই বিয়ে করেছিলেন মান্না দে। তার স্ত্রী সুলচনা কুমারান। দীর্ঘ জীবনে তাকে নিয়েই ছিলেন মান্না দে। তাদের সংসারে সুরোমা ও সুমিতা নামের দুই মেয়ে রয়েছে।

বর্ণাঢ্য সঙ্গীত জীবনে মান্না দে অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ভারতের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের ‘পদ্মশ্রী’, ‘পদ্ম ভূষণ’ ও ‘পদ্ম বিভুষণ’ সম্মাননা পেয়েছেন তিনি। এছাড়া সিনেমা জগতে ভারতের সর্বোচ্চ সম্মাননা দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি।

এর বাইরে তিনি দুইবার ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, সাতবার বেঙ্গল ফিল্ম জার্নালিস্ট’স অ্যাসোসিয়েশন অ্যাওয়ার্ড, একবার ফিল্মফেয়ার এবং ফিল্মফেয়ারে আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন।

২০১৩ সালের ২৪ অক্টোবর মান্না দে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি চলে গেলেও রয়ে গেছে তার অমর কীর্তিগুলো। গানের ভুবনেই তিনি অবিস্মরণীয় নক্ষত্র হয়ে থেকে যাবেন চিরকাল।

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন