শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ , ৯ জিলকদ ১৪৪৫

বিদেশ

কম্বোডিয়ার কৃষকরা আজও কালো মাটি দেখলে ভয় পান

নিউজজি ডেস্ক ২ মে , ২০২৪, ১৩:৪৫:৫৯

62
  • ছবি-ইন্টারনেট

ঢাকা: ১৯৭০ এর দশকে কম্বোডিয়ার বিরুদ্ধে মার্কিন বোমাবর্ষণ সম্পর্কে ধারনা করা হয় যে, পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির এক লাখ ১৩ হাজার লক্ষ্যবস্তুর উপর মার্কিন বাহিনী পাঁচ লাখ টনের বেশি বোমা নিক্ষেপ করেছে।

আমেরিকা যখন ভিয়েতনামের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চালাচ্ছিল তখন ১৯৭০ সালের ৩০ এপ্রিল ভিয়েতনামের প্রতিবেশী দেশ কম্বোডিয়ার ওপর স্থল ও আকাশপথে হামলে পড়ে ওয়াশিংটন এবং দেশটি দখল করে নেয়।

তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন কম্বোডিয়া দখলের উদ্দেশ্য সম্পর্ক বলেন, কম্বোডিয়া যুদ্ধকে ব্যবহার করে ওয়াশিংটন ভিয়েতনাম থেকে নিরাপদে তার সেনাদের সরিয়ে আনতে পারবে।

কম্বোডিয়া ভিয়েতনামের প্রতিবেশী হওয়া সত্ত্বেও দেশটি আমেরিকা-ভিয়েতনাম যুদ্ধে নিরপেক্ষ থাকার ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু তারপরও কম্বোডিয়া মার্কিন আগ্রাসন প্রতিহত করতে পারেনি।

কম্বোডিয়া দখলের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে নিক্সন আরো বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ আমেরিকা যদি বিভিন্ন পরীক্ষায় অসহায় দৈত্যের মতে আচরণ করে তাহলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীরা, জাতীয়তাবাদীরা এবং কমিউনিস্টরা ক্ষমতা দখল করবে; ফলে আমেরিকাসহ পুঁজিবাদী বিশ্বের স্বার্থ বিপন্ন হবে। একটি গোপন যুদ্ধ

একটি গোপন যুদ্ধ

তৎকালীন মার্কিন পররাষ্টমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারসহ হোয়াইট হাউজের যুদ্ধ পরিচালনা বিভাগের কর্মকর্তারা কম্বোডিয়ার বিরুদ্ধে ভয়াবহ বোমাবর্ষণের ঘটনাকে যথা সম্ভব মার্কিন জনগণের কাছে গোপন রাখার চেষ্টা করেন। এ কারণে মার্কিন সরকার কম্বোডিয়া যুদ্ধের খবরাখবর গণমাধ্যমে প্রকাশ করার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

কম্বোডিয়ার ওপর আমেরিকার এই সামরিক আগ্রাসনের ফলে সরাসরি কয়েক লাখ মানুষ নিহত হন। নিহতদের এই সংখ্যা ১০ লাখ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে বলেও ধারনা করা হয়।

কম্বোডিয়ার রাজনৈতিক ও সামাজিক অবকাঠামো ধ্বংস এবং খেমাররুজদের আত্মপ্রকাশ

কিসিঞ্জারের পরিকল্পনায় কম্বোডিয়ার বিরুদ্ধে যে বোমাবর্ষণ শুরু করা হয় তার ফলে দেশটির রাজনৈতিক ও সামাজিক অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে যায়। কম্বোডিয়ায় দেখা দেয় রাজনৈতিক অস্থিরতা। দেশটির ১০ লাখের বেশি মানুষ নিজেদের সহায় সম্বল হারিয়ে উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়। এভাবে কম্বোডিয়ায় সৃষ্ট রাজনৈতিক শূন্যতাকে ব্যবহার করে খেমাররুজরা দেশটির ক্ষমতা দখল করে। এই খেমাররুজরাও কম্বোডিয়ার জনগণের বিরুদ্ধে ইতিহাসের ভয়াবহ গণহত্যা চালায়। তাদের হামলায় কম্বোডিয়ার এক চতুর্থাংশ নাগরিক অর্থাৎ ১৬ লাখ মানুষ নিহত হয়।

কৃষকরা এখনও আতঙ্কিত

কম্বোডিয়ায় মার্কিন আগ্রাসনের ক্ষত আজও দেশটির জনগণ বয়ে বেড়াচ্ছে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, কিসিঞ্জারের নিক্ষিপ্ত বোমা এখনও সেদেশের কৃষকদের আতঙ্কিত করে রেখেছে।  সারাদেশের কৃষিজমিতে আমেরিকার নিক্ষিপ্ত অবিস্ফোরিত বোমা থেকে যাওয়ায় তারা চাষাবাদ করার সময় কালো মাটি দেখলেই ভয়ে আঁতকে ওঠেন এবং ওই মাটিতে হালচাষ করা থেকে বিরত থাকেন।

প্রতিবাদী শিক্ষার্থীদের ওপর হত্যাকাণ্ড

কম্বোডিয়ার ওপর আগ্রাসনের খবর ছড়িয়ে পড়লে খোদ মার্কিন জনগণ হোয়াইট হাউজের যুদ্ধকামী নেতাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় নেমে আসে। এই প্রতিবাদ বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মার্কিন সরকার বিষয়টি সহজভাবে নিতে পারেনি। হোয়াইট হাউজের নির্দেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালায় মার্কিন পুলিশ। ওই হামলায় ওহাইও বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু শিক্ষার্থী পুলিশের গুলিতে হতাহত হয়।

দখলদারিত্বের অবসান

আমেরিকায় প্রতিবাদ বিক্ষোভ অব্যাহত থাকলে মার্কিন কংগ্রেস একটি বিল পাস করতে বাধ্য হয়। ১৯৭০ সালের জুলাই মাসে পাস হওয়া ওই বিলে প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে কম্বোডিয়া থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করার আহ্বান জানানো হয়। শেষ পর্যন্ত ওই বছরের শেষ নাগাদ দেশটি থেকে সকল মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করা হয়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কম্বোডিয়া থেকে সরে গেলেও দেশটিতে একটি তাবেদার সরকারকে ক্ষমতায় রেখে যায়। কিন্তু ভিয়েতনাম যুদ্ধে আমেরিকার পরাজয়ের ফলে কম্বোডিয়ার সেই তাবেদার সামরিক সরকারেরও পতন ঘটে।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, কম্বোডিয়ায় আগ্রাসন চালানোর ঠিক পাঁচ বছরের মাথায় (১৯৭৫ সালের ৩০ এপ্রিল) মার্কিন সেনারা ভিয়েতনাম যুদ্ধে পরাজিত হয়। সূত্র: পার্সটুডে

নিউজজি/ এস দত্ত

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন