বুধবার, ১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১ , ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার
  >
ব্যক্তিত্ব

৪৫ বছর বয়সেও লাবণ্যময়ী লারা দত্ত

নিউজজি ডেস্ক ১৬ এপ্রিল , ২০২৪, ১৪:৪১:৫৫

62
  • ৪৫ বছর বয়সেও লাবণ্যময়ী লারা দত্ত

ঢাকা: লারা দত্ত (জন্ম: ১৬ এপ্রিল ১৯৭৮) একজন ভারতীয় মডেল ও চলচ্চিত্র অভিনেত্রী। তিনি ২০০০ সালে মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় জয় লাভ করেন। ভারতের উত্তর প্রদেশের গাজিয়াবাদ এলাকায় ১৯৭৮ সালের ১৬ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

১৯৮১ সালে যখন তার বয়স মাত্র ৩ তখন তার পরিবার ব্যাঙ্গালোর চলে আসে এবং সেখান থেকেই তিনি তার স্কুলের পড়াশুনা করেন। তিনি ব্যাঙ্গালোরের সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ার গার্লস হাই-স্কুল এবং ফ্রাঙ্ক অ্যান্টনি পাবলিক স্কুল থেকে তার স্কুলের পড়াশুনা শেষ করেন। এরপর তিনি মুম্বাই ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক এবং মাইনর ইন কমিউনিকেশন ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি হিন্দি এবং ইংরেজিতে ভাষায় সাবলীল ভাবে কথা বলার পাশাপাশি পাঞ্জাবি, তামিল এবং কন্নড় ভাষাও বলতে পারেন।

বর্তমানে লারা বিবাহিত তবে বিয়ের আগে তার অনেকের সাথে সম্পর্ক ছিল। ভুটানী অভিনেতা এবং মডেল কেলি দর্জির সাথে তার ৯ বছর সম্পর্ক ছিল। এরপর তিনি আমেরিকান প্রফেশনাল বেসবল খেলোয়াড় ডেরেক জেটের সাথে অল্পকিছু দিন ডেট করেন।

২০১০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি ভারতীয় টেনিস খেলোয়াড় মহেশ ভূপতির সাথে বাগদান করেন। এরপর ২০১১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারী মুম্বাইয়ের বান্দ্রাতে একটি সামাজিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিয়ে করেন এবং ২০১১ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি গোয়ার সানসেট পয়েন্টে তাদের রিসেপশনের অনুষ্ঠান করেন। ১অগাস্ট ২০১১ সালে লারা প্রথম সন্তানের জন্য পেগনেন্টের খবর ঘোষণা করেন। ২০১২ সালের ২০  জানুয়ারি তিনি একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন যার নাম সাইরা ভূপতি।

ছোট থেকেই তার মডেলিংয়ের প্রতি আগ্রহ ছিল এবং স্কুলে পড়ার সময় থেকেই তিনি মডেলিং শুরু করেন। তিনি ১৯৯৫ সালে বার্ষিক গ্ল্যাড্র্যাগস মেগামডেল ইন্ডিয়া প্রতিযোগিতা জিতেন। এটি ছিল তার জেতা প্রথম সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতা জিতে তিনি ১৯৯৭ সালের মিস ইন্টারকন্টিনেন্টাল প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করার সুযোগ পান এবং তিনি মিস ইন্টারকন্টিনেন্টাল ১৯৯৭ মুকুট জয় লাভ করেন।

২০০০ সালে তিনি ফেমিনা মিস ইন্ডিয়া প্রতিযোগিতায় অংশ নেন এবং প্রতিযোগিতার ফাইনালে তিনি প্রথম স্থান অধিকার করে ফেমিনা মিস ইন্ডিয়া উনিভার্সের খেতাব জেতেন। এই ফেমিনা মিস ইন্ডিয়া প্রতিযোগিতায় প্রিয়াঙ্কা চোপড়া দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে ফেমিনা মিস ইন্ডিয়া ওয়ার্ল্ড এর খেতাব জেতেন এবং দিয়া মির্জা প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় রানার আপ হন। ফেমিনা মিস ইন্ডিয়া উনিভার্সের খেতাব জিতে তিনি ৪৯তম মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায় ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার অধিকার অর্জন করেন।

২০০০ সালে সাইপ্রাসে তম অনুষ্ঠিত মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতার ফাইনালে তিনি সাঁতারের পোষাক প্রতিযোগিতায় সর্বোচ্চ স্কোর অর্জন করেছিলেন এবং তার ফাইনালিস্ট ইন্টারভিউ স্কোরটি ছিল মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতার ইতিহাসে যেকোনো বিভাগে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর। তার ইন্টারভিউ দেখার পর বেশিরভাগ বিচারক তাকে সর্বোচ্চ ৯.৯৯ নম্বর দেন। প্রতিযোগিতার শেষ প্রশ্নোত্তর পর্বের সময় শীর্ষ ৩ প্রতিযোগীদের প্রত্যেককে হোস্ট সিনবাদ একই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেন, “এই মুহূর্তে, স্টেডিয়ামের বাইরে একটি প্রতিবাদ করা হয়েছে যা নারীদের প্রতি অবমাননা হিসাবে প্রতিযোগিতাকে তুলে ধরেছে। তাদের বোঝান যে তারা ভুল”। প্রশ্নের উত্তরে লারা বললেন, ‘মিস ইউনিভার্সের মতো প্রতিযোগিতা আমাদের তরুণীদের এমন ক্ষেত্রগুলিতে প্রবেশ করার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম দেয় যা আমরা করতে চাই এবং এগিয়ে যেতে চাই, তা উদ্যোক্তা হোক, সশস্ত্র বাহিনী হোক, রাজনীতি হোক। এটি আমাদের পছন্দ এবং মতামত প্রকাশ করার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম দেয় এবং আমাদেরকে শক্তিশালী এবং স্বাধীন করে তোলে যে আমরা আজ’। প্রতিযোগিতার শেষে তিনি মিস ইউনিভার্স ২০০০ এর মুকুট জেতেন দ্বিতীয় ভারতীয় মহিলা হিসাবে সুস্মিতা সেনের পর। তাকে মিস ইউনিভার্স  ১৯৯৯ এর বিজয়ী বতসোয়ানার Mpule Keneilwe Kwelagobe মিস উনিভার্সের মুকুট পেরিয়ে দেন।

২০০০ সালে তিনি প্রথম ভারতীয় বিউটি প্রতিযোগিতার বিজয়ী হিসাবে ‘মিস গ্র্যান্ড স্ল্যাম ২০০০’ এর টাইটেল জেতেন।

ফিল্মি ক্যারিয়ার লারা ২০০৩ সালে ‘আন্দাজ’ সিনেমা দিয়ে বলিউডে আত্মপ্রকাশ করেন। সিনেমাটিতে তিনি অক্ষয় কুমার এবং প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার সাথে অভিনয় করেন। সিনেমাটি বক্স অফিসে সফল হয়েছিল। এই একই বছর তিনি আরও একটি সিনেমাতে অভিনয় করেন অভিষেক বচ্চনের বিপরীতে ‘মুম্বাই সে আয়া মেরা দোস্ত’ সিনেমায়।

২০০৪ সালে তিনি ‘আরসাচি’ সিনেমা দিয়ে তামিল সিনেমায় আত্মপ্রকাশ করেন। এই সিনেমার জন্য তিনি ২০০২ সালে স্বাক্ষর করেন কিন্তু ফিন্যান্সিয়াল প্রবলেমের জন্য সিনেমাটি ২০০৪ সালে মুক্তি পাই।

২০০৫ সালে তিনি অনিল কাপুর, সালমান খান, ফারদিন খান, বিপাশা বসু, এশা দেওল এবং সেলিনা জেটলির সাথে ‘নো এন্ট্রি’ সিনেমাতে অভিনয় করেন এবং সিনেমাটি সেই বছরের সবচেয়ে বড় হিট হয়ে ওঠে সবচেয়ে বেশি টাকা ইনকাম করে।

২০০৭ সালে তিনি সালমান খানের বিপরীতে ‘পার্টনার’ সিনেমায় অভিনয় করেন এছাড়াও সিনেমাটিতে তিনি গোবিন্দা এবং ক্যাটরিনা কাইফের সাথে অভিনয় করেন। সিনেমাটি সেই বছরের সবচেয়ে বেশি আয় করা হিন্দি সিনেমার মধ্যে একটি।

২০১১ সালে তিনি শাহরুখ খানের সাথে ডন  সিনেমাতে অভিনয় করেন এছাড়াও সিনেমাটিতে তিনি বোমান ইরানি এবং কুনাল কাপুরের সাথে অভিনয় করেন। সিনেমাটি বক্স অফিসে বেশ সফল হয়েছিল।

২০২১ সালে তিনি অক্ষয় কুমার অভিনীত বেল বটম সিনেমায় ইন্দিরা গান্ধীর চরিত্রে অভিনয় করেন। এছাড়াও তিনি আরও অনেক সিনেমায় অভিনয় করেছেন। নিচে তার সমস্ত সিনেমার নাম দেয়া হলো।

লারা সিনেমার পাশাপাশি টেলিভশন এবং ওয়েব সিরিজেও অভিনয় করেছেন। ২০১৯ সালে তিনি ব্রিটিশ টিভি সিরিজ ‘বিচাম হাউস’-এ অভিনয় করেন। ২০২০ সালে তিনি ওয়েবে আত্মপ্রকাশ করেন ডিজনি প্লাস হটস্টারের ওয়েব সিরিজ ‘হান্ড্রেড’ দিয়ে। এরপর ২০২১ সালে তিনি লায়ন্সগেট প্লে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে ‘Hiccups and Hookups’ এবং ২০২২ সালে জী5 ওটিটি প্লাটফর্মে ‘কৌন বানেগি শিখরবতী’ ওয়েব সিরিজে অভিনয় করেন।

লারা দত্তের সিনেমা গুলো হলো—২০০৩ সালে আন্দাজ ছিল তার প্রথম সিনেমা। ২০০৩ মুম্বাই সে আয়া মেরা দোস্ত, ২০০৪ খাকী (আইসা জাদু গানে অতিথি শিল্পী), ২০০৪ মাস্তি, ২০০৪ বরদাষ্ট, ২০০৪ সালে আরসাচি প্রথম তামিল সিনেমায় কাজ করেন তিনি। তার অভিনীত অন্যান্য সিনেমাগুলো হলো—ইনসান, এলান, জুর্ম, কাল, নো এন্ট্রি, দোস্তি: ফ্রেন্ডস ফরএভার, জিন্দা, বিল্লু বারবার, ডু নট ডিস্টার্ব, ব্লু, হাউসফুল, চালো দিল্লি, ডন ২, ওয়েলকাম টু নিউ ইয়র্ক ও বেল বটম ইত্যাদি।

তাকে নিয়ে রয়েছে অনেক নিয়ে বিতর্ক। ২০০৫ সালে লারা ‘গ্ল্যাড্র্যাগস’ ম্যাগাজিনের বিরুদ্ধে বোম্বে হাই কোর্টে একটি মামলা করেন কারণ ম্যাগাজিন কোম্পানিটি তাদের আসন্ন একটি মডেলিং প্রতিযোগিতার প্রচারের জন্য তার ছবি ব্যবহার করেন যা কপিরাইটের নিয়ম লঙ্ঘন। তিনি এই মামলাটি জিতে যান এবং আদালত গ্ল্যাড্র্যাগস ম্যাগাজিন কোম্পানিকে তাদের প্রচারের জন্য লারা দত্তের ছবি ব্যবহার করতে নিষেধ করে।

২০১০ সালে তিনি শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে আইফা অ্যাওয়ার্র্ডের জন্য ওয়ারড্রোব ত্রুটির শিকার হন।

২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি এবং তার স্বামী মহেশ ভূপাতি গীতাঞ্জলি জেমস লিমিটেডের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসাবে গীতাঞ্জলির বিরুদ্ধে টাকা পয়সার পাওয়ানা নিয়ে পাটিশন দাখিল করেন। তাদের মতে তারা গীতাঞ্জলির সাথে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসাবে ২ বছরের চুক্তি করেন এবং কিছু বাতিলকরণের জন্য তাদের গীতাঞ্জলিকে অর্থ প্রদান করতে হয়েছিল কিন্তু গীতাঞ্জলি তাদের বকেয়া অর্থ প্রদান করেনি।

২০১৮ সালের ৯ এপ্রিল তিনি একটি ছবি টুইট করেন, ছবিটিতে তিনি তার স্বামীর স্বামীর অস্ট্রেলিয়ান ওপেন, ইউএস ওপেন, উইম্বলডন এবং ফ্রেঞ্চ ওপেনের তোয়ালে ব্যাবহার করে বৃষ্টির জল আটকানোর জন্য যাতে ঘরে জল না ঢোকে। তার এই টুইটটি দেখে তার স্বামী একদমই খুশি হননি এবং রাগান্বিত ভাবে উত্তর দেন।

২০১০ সালে ভূপতি দম্পতি একটি চলচ্চিত্র নির্মাণকারী সংস্থা বিগ ডেডি প্রোডাকশন্স প্রতিষ্ঠা করেন।

নিউজজি/নাসি

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন