মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১ , ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

এবার তৈরি হচ্ছে এআই শিশু!

নিউজজি ডেস্ক ১৭ এপ্রিল , ২০২৪, ১৩:১০:৫০

51
  • ছবি-ইন্টারনেট

ঢাকা: অভাবনীয় উন্নতি সত্ত্বেও এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখনো মানুষের বশে রয়েছে৷ কিন্তু ভবিষ্যতে সেই প্রযুক্তির সঙ্গে মানুষের বন্ধন ও আবেগের সম্পর্কের সম্ভাবনা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে৷

প্রথমে বান্ধবী ও পোষা প্রাণীর এআই সংস্করণ এসেছিল৷ এবার চীনের গবেষকরা এআই শিশু সৃষ্টি করেছেন!  বেইজিং ইনস্টিটিউট ফর জেনারেল আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সেই ভার্চুয়াল চাইল্ড সৃষ্টি করেছে৷ সেই অবতার স্বাভাবিক সংলাপ চালাতে পারে, কনটেক্সট বা প্রেক্ষাপট বুঝতে এবং সংলাপের সময়ে সামঞ্জস্যও বজায় রাখতে পারে৷

চ্যাটজিপিটি-ও তো সেই কাজ করতে পারে৷ কিন্তু টং টং-এর বৈশিষ্ট্য হলো, সে শিখতে, মানিয়ে নিতে এবং নিজের ভার্চুয়াল পরিবেশের সঙ্গে ভাবের আদানপ্রদান করতে পারে৷ এমনকি মানুষের আবেগ শনাক্ত করে প্রতিক্রিয়াও দেখাতে পারে৷

এক পরীক্ষায় তার সহজ কিছু ক্ষমতার পরিচয় পাওয়া গেল৷ পড়ে যাওয়া তরল পরিষ্কার, বেঁকে যাওয়া ছবির ফ্রেম মেরামতি বা উঁচু জায়গায় চেয়ার নিয়ে যাওয়া তার জন্য কোনো সমস্যাই নয়৷ মানুষের নির্দেশ ছাড়াই স্বতন্ত্রভাবে এমন কাজ চলছে৷

কোনো একদিন সে আর্টিফিশিয়াল জেনারেল ইন্টেলিজেন্স বা এজিআই আয়ত্ত করবে বলে তার স্রষ্টারা আশা করছেন৷ অর্থাৎ সেই এআই-এর মধ্যে মানুষের সব বৈশিষ্ট্য থাকবে৷ যেমন স্বতন্ত্রভাবে কগনিশন বা জ্ঞান গ্রহণ করা, সিদ্ধান্ত নেওয়া, সামাজিক স্তরে আদানপ্রদান ও আবেগ৷

‘জারভিস' নামে আয়রন ম্যানের সহকারীকে মনে আছে?টং টং-এর মতো প্রোগ্রাম সেই দিশায় প্রথম পদক্ষেপ৷ কিন্তু সেটিকে শিশু হিসেবে তুলে ধরা কিছুটা অদ্ভুত নয় কি?

ডেভেলপারদের মতে, পুরোপুরি উন্নত এজিআই যদি কোনো প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মতো হয়, তাহলে টং টং-এর ক্ষমতা চার বছর বয়সি শিশুর সঙ্গে তুলনীয়৷ তাছাড়া শিশুর মতো চেহারার পেছনে অন্য কারণও রয়েছে৷ মানুষ অতি বুদ্ধিমান এআই শুনলে ভয় পায়, কিন্তু শিশুদের ভালোবাসে৷

আবার ‘জারভিস'-র প্রসঙ্গে ফেরা যাক৷ এমন এক এআই সহকারীর কথা ভাবা যাক, যে একাধিক কাজ করতে পারে৷ সে আপনার হয়ে কোনো ইমেলের জবাব দেবে, ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট করবে, আপনি ক্লান্ত হলে কফিও তৈরি করে দেবে৷

শুনতে খারাপ লাগছে না৷কিন্তু এমন সব অ্যালগোরিদম শুধু পার্সোনাল অ্যাসিস্টেন্টের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না৷ সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র এআই অনেক ক্ষেত্রে মানুষ কর্মীর বিকল্প হয়ে উঠবে৷যেমন গ্রাহক পরিষেবা ও আর্থিক ক্ষেত্রে সে কাজ সামলাবে৷

কিন্তু খেলাচ্ছলে চ্যাটজিপিটি ঘাঁটাঘাঁটি করে আমাদের একটা উপলব্ধি হয়েছে৷ আর সেটা হলো, অ্যালগোরিদম যতই উন্নত হোক না কেন, কখনো কখনো সেটি সম্পূর্ণ অর্থহীন বার্তা সৃষ্টি করে৷ অনেক সময়ে সেটা মানুষ বুঝতেও পারে না৷ কোনো এআই মডেল স্বাধীনভাবে কাজ করতে গিয়ে ভুল করলে মানুষের জীবনও বিপন্ন করতে পারে৷

চিকিৎসাশাস্ত্রের কথাই ধরা যাক৷ কোনো এজিআই সার্জারির সময়ে সহায়তা, রোগ নির্ণয় বা চিকিৎসা প্রক্রিয়ায় সহায়তা করতে পারে৷ কিন্তু বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধান ছাড়া কোনো ভুল করলে রোগীর স্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক কুপ্রভাব পড়তে পারে৷

ফলে আমাদের ঝুঁকি কমানোর পথ খুঁজতে হবে৷ সেইসঙ্গে অ্যালগোরিদমের সঙ্গে মানুষের পার্থক্য প্রায় দূর হতে চলায় আমাদের এআই-এর সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি নতুন করে ভাবতে হবে৷

প্রথমদিকে এআই শিশু একটু অদ্ভুত লাগতে পারে বটে, কিন্তু যাদের নিজস্ব সন্তান পাওয়ার উপায় নেই, তাদের জন্য সেটা একটা পথ হতে পারে৷ অথবা যে বাবা-মায়েরা সন্তান হারিয়েছেন, তারা হয়তো এভাবে শোকের মাত্রা কিছুটা কমাতে পারেন৷ যথেষ্ট তথ্য থাকলে তাঁরা এমনকি হয়তো হারানো শিশুর ডিজিটাল সত্তা সৃষ্টি করতে পারেন৷

কিন্তু এ ক্ষেত্রেও এআই-এর ভুলত্রুটি থেকে সুরক্ষার কথা ভাবতে হবে৷ যেমন আপনার এআই শিশু আচমকা নিজের ব্যক্তিত্ব বদলে ফেললে কেমন লাগবে ভাবুন তো? অথবা সে পুরোপুরি কাজ বন্ধ করে দিলেও আপনার আবেগ বড় ধাক্কা খেতে পারে৷ তাছাড়া স্বাধীনভাবে চিন্তা ও আবেগ সৃষ্টি করতে সক্ষম কোনো এআই-এর সঙ্গে সম্পর্কের বন্ধন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে নানা প্রশ্ন উঠে আসে৷

নৈতিকতার বিচারে সেই এআই-কে শুধু এক যন্ত্র হিসেবে গণ্য করা উচিত, নাকি এআই-এর ‘অধিকার' সম্পর্কেও ভাবনাচিন্তা করা উচিত?

এ সব কথা শুনে মাথা ঘুরে যাচ্ছে? কিন্তু আমরা কি আদৌ এমন ভবিষ্যৎ চাই? -ডয়চে ভেলে

নিউজজি/এস দত্ত

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন