মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১ , ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

বিদেশ

ইসরাইলে হামলার পেছনে ইরানের যত কারণ

নিউজজি ডেস্ক ১৭ এপ্রিল , ২০২৪, ০০:২০:২৮

58
  • ইসরাইলে হামলার পেছনে ইরানের যত কারণ

ঢাকা: কথায় বলে চোরের দশ দিন গৃহস্থের একদিন। ইরানের মাটি ও মানুষ নিয়ে ইসরাইল ষড়যন্ত্রে ব্যস্ত সেই বহু কাল থেকে। ইরানকে নিজেদের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি মনে করে, এই মধ্যপ্রাচ্যে উড়ে এসে জুড়ে বসা ইসরাইল। তাই সময় সুযোগ পেলেই ইরানের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট যে কোন কিছুতে আঘাত করেছে, হত্যা করেছে।

শেষ পর্যন্ত সীমা অতিক্র করতে করতে গত এক এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে বিমান হামলা চালিয়ে বিপ্লবী গার্ডের এক শীর্ষ কমান্ডারসহ ৯ জনকে হত্যা করে ইসরাইল। এবার আর সহ্য করেনি ইরান। প্রথমবারের মতো ইসরাইলের মাটিতে হামলা করেছে তেহরান।

দেশটি বলছে, ইসরাইলে ড্রোন ও মিসাইল হামলার বিষয়টি এতো সহজ ছিলো না, সাধারণ কোন বিষয় ছিল না। এটাকে নিছক বদলা হিসাবেও দেখা যাবে না। তেহরান বলছে, তাদের নতুন একটি কৌশলের প্রথম কাজ ছিলো ইসরাইলি ভূখন্ডে পরিচালিত এই আক্রমণ। ইরানের কৌশল সফল হয়েছে।

চিরশত্রু ইসরাইলকে একটি পরিস্কার বার্তা পাঠানো প্রয়োজন হয়ে পড়েছিলো ইরানের জন্য। কথায় কথায় সন্ত্রাসি তকমা দিয়ে, আর ইসরাইলের নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে ইরান বা ইরানের স্বার্থে কোন ধরনের আঘাত বা হামলা সহ্য করা হবে না। ভবিষ্যতে যে কোনো আক্রমণের জবা হবে সরাসরি এবং শাস্তিমূলক।

বিগত বছরগুলোতে জয়নবাদি ইসরাইলের বিরুদ্ধে ইসলামী প্রজাতন্ত্রের দেশ ইরান ছায়াযুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। ইসরাইলের ভেতর থেকে যেমন তাদের প্রক্সি আমেরিকা এই ছায়াযুদ্ধে অংশ নেয়, তেমনি ইরানের হয়েছে প্রক্সি দিচ্ছে বেশ কিছু সশস্ত্র সংগঠন, যাদের মধ্যে নিঃসন্দেহে সবচেয়ে শক্তিশালী হিজবুল্লাহ।

কিন্তু ইসরাইলের দামেস্ককাণ্ডের পর দৃশ্যপট পাল্টে যায়। এই হামলার প্রতিশোধ নিতে নজিরবিহীন ড্রোন ও মিসাইল হামলা চালায় ইরান। ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী দাবি করেছে, তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সফলতার সঙ্গে বেশিরভাগ মিসাইল ও ড্রোনকে আকাশেই নিষ্ক্রিয় করেছে।

ইরান বলেছে, তারা ইসরাইলকে প্রবল আঘাত করতে সক্ষম হয়েছে এবং অভিযানটিকে সফল বলে প্রশংসা করেছে। ইরানের বিজয় দাবি করে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন দেশটির অনেক শীর্ষ কর্মকর্তা। প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি বলেছেন, এই অভিযান একটি অধ্যায় সূচনা করেছে এবং জায়নবাদী শত্রুকে উচিৎ শিক্ষা দিয়েছে।

ইরানের প্রেসিডেন্টের রাজনৈতিক সহকারি মোহাম্মদ জামশিদি এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, এখন সমীকরণ বদলেছে। ইরানের মানুষকে লক্ষ্য করে হামলা হলে কর্তৃত্ববাদি গোষ্ঠিকে সরাসরি জবাব দেয়া হবে। তিনি পরিস্কার ভাষায় জানিয়েছেন, দামেস্কের ঘটনায় আত্মরক্ষার অধিকার রাখে ইরান।

তেহরান আরও দাবি করেছে, তাদের হামলা সীমতি ছিলো। সাধারণ মানুষকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়নি। ইসরাইল গাজা উপত্যকায় যেভাবে নিরীহ ফিলিস্তিনি নারী-শিশুসহ সাধারণ মানুষকে হত্যা করছে, তাতে পশ্চিমরা তেল আবিবকে সংযত করতে ব্যর্থ হয়েছে। ইসরাইলের কর্তৃত্বকে জবাব দেয়ার অধিকার ইরানের আছে।

ইসরাইল-হামাস যুদ্ধের মধ্যে মাধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বেড়েছে যা লেবানন, সিরিয়া, ইরাক এবং ইয়েমেনে ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোতে টানা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে সিরিয়াতে সিনিয়র কমান্ডারসহ বেশ কয়েকজন আইআরজিসি সদস্য নিহত হয়েছে, যার জন্য ইরানও ইসরাইলকে দায়ী করেছে।

১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের পর থেকে, ইরান প্রায়শই ইসরাইলকে ধ্বংস করার আহবান জানিয়েছে এবং ফিলিস্তিনিদের সমর্থনকে তার পররাষ্ট্র নীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছে। তবে শনিবার পর্যন্ত ইসরাইলে সরাসরি আঘাত করা থেকে বিরত ছিলো। যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবাক করে দিয়েছিল।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কয়েক দশক ধরে ইরান এই অঞ্চলে তার প্রভাব বিস্তার করতে এবং ইসরাইল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করতে তার মিত্র গোষ্ঠীর নেটওয়ার্কের উপর নির্ভর করে। ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউট বলছে, ইসলামী প্রজাতন্ত্রের সূচনা থেকে তেহরান ‘কৌশলগত ধৈর্য্য’ নীতি গ্রহণ করেছে।

প্রাক্তন মধ্যপন্থী প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি কৌশলটির একজন কট্টর রক্ষক ছিলেন, বিশেষ করে ২০১৮ সালে ওয়াশিংটনের একটি যুগান্তকারী পারমাণবিক চুক্তি থেকে সরে আসার পরও তেহরানের পক্ষে অবিলম্বে পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ না করার এবং দীর্ঘ দৃষ্টিভঙ্গি নেওয়ার পক্ষে পরামর্শ দিয়েছিলেন।

২০২০ সালে ইরানের আইআরজিসি কমান্ডার কাসেম সোলেইমানিকে হত্যার পরেও তেহরান ওয়াশিংটনকে পূর্ব সতর্কতা দিয়েই ইরাকে দুটি আমেরিকান ঘাঁটির বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র চালায় এবং সে হামলায় কোনও সৈন্য নিহত হয়নি। ইসরাইলে হামলার সময়ও এই বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়েছে তেহরান।

ইরানের মিডিয়া এই হামলাকে একটি ঐতিহাসিক সাফল্য হিসাবে প্রশংসা করেছে। বলেছে যে, আক্রমণাত্মক মনোভাব এই অঞ্চলে একটি নতুন শক্তি সমীকরণ তৈরি করেছে। ইরানের একটি অভিজ্ঞতার প্রয়োজন ছিল, ভবিষ্যতের যুদ্ধে কীভাবে কাজ করতে হবে তা জানার জন্য।

ইরানি গণমাধ্যমগুলো বলছে, এই আক্রমণ ইসরাইলকে তেহরানের বিরুদ্ধে কোনও অপরাধ করার আগে অনেক আগে ভাবতে বাধ্য করবে। এই হামলা স্থিতাবস্থার অবসান ঘটিয়েছে এবং বিরোধের নিয়ম ভেঙে দিয়েছে যা বিশ বছর ধরে উভয় পক্ষকে একে অপরের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছিল।

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন