মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১ , ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

সাহিত্য
  >
গল্প

গল্প নয়

আবু নাসিব ডিসেম্বর ১৮, ২০২২, ১৪:৪০:২৮

571
  • গল্প নয়। ছবি: ভেনাস, ইন্টারনেট থেকে।

আজ কয়দিন আগের একটি ঘটনার কথা লিখব। অফিস যাচ্ছিলাম দীর্ঘ পথ হেঁটে । পকেটে কোনো টাকা পয়সা ছিল না ।  সকালে খেয়েও বের হইনি । নিজেকে খুব অসহায় নিঃস্ব লাগছিল, অবহেলিত অপমানিত প্রতারিত মনে হচ্ছিল । পৃথিবীর দরিদ্রতম মানুষ মনে হচ্ছিল। চার পাশের মানুষ দ্বারা ভাগ্য দ্বারা এতটা প্রতারিত, লাঞ্ছিত হয় কোনো মানুষ! বৃষ্টিতে এলিফ্যান্ট রোডের এক জুতার দোকানের ছাউনিতে দাঁড়িয়ে এই সব ভাবছিলাম । হঠাৎ দেখি অপর পাশের দোকানের ছাউনিতে এক কিশোর দাঁড়িয়ে আছে সম্পূর্ণ উলঙ্গ । কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার তার শিশ্ন দেখা যাচ্ছে না! সেটা কি নেই নাকি এতটাই ছোট দূর থেকে দেখা যাচ্ছে না! ওই জায়গাটা খুব কালো দেখাচ্ছে । আমার মনে হলো ময়লা জমে কালো হয়ে আছে । ভালো ভাবে লক্ষ্য করলাম ওর মুখের দিকে । প্রথমে মনে হলো দশ এগারো বছরের এক মিষ্টি বাচ্চা ছেলে, পরে মনে হলো, না, আমি বিভ্রান্ত হয়েছি, সে এক কিশোরী । তাহলেতো ওই জায়গাটা যোনি। আর জায়গাটা ময়লা না, দীর্ঘ দিন পরিষ্কার না করায় যোনিকেশে ভরে আছে । দূর থেকে যেটাকে আমি ময়লার কালো বলে ধরে নিয়েছিলাম । তাহলে হয়তো ওর বয়স দশ এগারো না, আরো একটু বেশি। বারো তেরো অথবা চৌদ্দ। দশ এগারো বছরের কিশোরীর কি যোনিকেশ হয়? নিশ্চিত হওয়ার জন্য ওর বুকের দিকে তাকালাম স্তন আছে কি না দেখবার জন্য । ও বুকে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে । না বুক ঢাকবার জন্য না, সাধারণত আরাম করে দাঁড়াবার জন্য আমারা হাত ভাঁজ করে যে ভাবে দাঁড়াই, সেভাবে । ওর নগ্নতার ব্যাপারে ওর অভিব্যক্তিতে কোনো অস্বস্তি নেই । ওর মুখটি খুব গভীর ভাবে নিরীক্ষণ করে মনে হলো, ও আসলে মেয়েই । পরে অবশ্য বুক থেকে হাত সরালে স্তন দেখা গেল, ‌ ছোট অপুষ্ট দুটি স্তন লেপ্টে আছে ওর বুকে । কী নিষ্পাপ একটি চেহারা ঢাকা শহরের ব্যস্ত রাজপথে দাঁড়িয়ে আছে, সম্পূর্ণ অনাবৃত । নিজের নগ্নতা সম্পর্কে অসচেতন । যেন এ নগ্নতা খুবই স্বাভাবিক । বরং আমরা, রাস্তার অন্যান্যরা লজ্জায় তাকাতে পারছিলাম না ওর দিকে, সবার মুখে এমন একটা ভাব যেন এটা কোনো ঘটনাই না, খুব স্বাভাবিক একটা ঘটনা। এই ঘটনায় মেয়েটি এত নিস্পৃহ কেন? ও কি পাগল! চেহারা, হাবভাব নড়াচড়া দেখেতো তা মনে হচ্ছে না! এই চেহারা যদি কোনো অবস্থাসম্পন্ন পরিবারে হতো, নিশ্চিত ওর পেছনে প্রেমিকদের লাইন লেগে যেত ।

আমরা রাস্তার কেউই ওর দিকে সরাসরি তাকাতে পারছি না লজ্জায় । সে এমন এক জায়গায় দাঁড়ানো যে বারবার ওর ওপর গিয়ে চোখ পড়ছে । ওর আশপাশের লোকেরাও ওর দিকে তাকাচ্ছে না । এক স্কুল ফেরত মা মেয়ে যাচ্ছিল ওর সামনে দিয়েই । মেয়েটি ওর থেকে বয়সে বেশ ছোট । সামনে মেয়েটি, পেছনে তার মা । মেয়েটি একবার সম্পূর্ণ মুখ ঘুরিয়ে ওকে দেখল, জানি না বাচ্চা মেয়েটির মনে এই ঘটনা কী রেখাপাত হ’ল ।

দাঁড়ানো অবস্থা থেকে ও বসল, পায়ের ওপর পা তুলে । ভাব ভঙ্গি একই রকম সহজ সাবলীল! ও কি এই রকম নগ্নতায় অভ্যস্ত হয়ে গেছে! কতদিন সে এমন নগ্ন! কতটা দরিদ্র! বাবা মা বা কোনো অভিভাবক নেই!

বৃষ্টি তখনো পুরোপুরি কমেনি, মেয়েটি ওই মার্কেট থেকে বেরিয়ে পাশের একটি বিল্ডিং-এর গাড়ি পার্কিং-এর ছাউনির নিচে আরেকটি লোকের পাশে গিয়ে দাঁড়াল; লোকটির মুখ নির্বিকার। পাশের দোকানের এক যুবক হুট করে তার সামনে পড়ে মুখ নিচু করে হাসতে হাসতে আবার তার দোকানের দিকে ফিরে গেল।

ছেলেটির জানা ছিল না এই রকম একটি দৃশ্যের মুখোমুখি হতে হবে । সে গিয়ে তার দোকানে বসা আরেক যুবককে কী যেন বলছে হাসতে হাসতে। ওই যুবক মিটিমিটি হাসছে ।

একবার মনে হলো যাই আমিও ওর পাশে নগ্ন হয়ে দাঁড়াই। একটি যোনির পাশে সকল শক্তি নিয়ে প্রতিবাদে দাঁড়াক একটি লিঙ্গ। কিন্তু না মেরুদণ্ডহীনদের লিঙ্গও যোগ্য সময়ে দাঁড়ায় না।

আমার অবস্থা ওর থেকে ভালো, নাকি ওর মতোই । বৃষ্টিটা কমে এলে এই কথা ভাবতে ভাবতে অফিসের পথ ধরলাম ।

নিউজজি/নাসি

 

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন