মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১ , ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

বিনোদন

বহু জনপ্রিয় গানের স্রষ্টা মিল্টন খন্দকার

ফারুক হোসেন শিহাব  জানুয়ারী ১২, ২০১৭, ২১:৩০:৫৪

18K
  • বহু জনপ্রিয় গানের স্রষ্টা মিল্টন খন্দকার

পরিবারের সবাই সংস্কৃতিমনা হওয়ায় ছোট থেকেই একটু-আধটু গান গাইতেন। স্কুলে জাতীয় সংগীত গাইতে হলে শিক্ষকরা তার নেতৃত্বে সবাইকে গাওয়াতেন। সেই সময় থেকেই গানের পাখি হয়ে আকাশে উড়তে চাইতো তার উদাসী মনন। কিশোর বয়সেই যুক্ত হন থিয়েটার চর্চার সাথে। কুষ্টিয়ার বোধন থিয়েটারের প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে একনিষ্ঠ সংগঠক-অভিনেতা। সেখানে নাটকে অভিনয় এবং সেমিনার-কর্মশালায় অংশগ্রহনসহ সক্রিয় কার্যক্রমের এক পর্যায়ে জানতে পারেন, নাটকের জন্য কন্ঠের ব্যায়াম খুবই জরুরী। সেই সুবাদে ভাবলেন কন্ঠের ব্যায়ামের পাশাপাশি গানটাও-তো শেখা যায়। তখন ওস্তাদ খন্দকার মিজানুর রহমান বাবলুর কাছে গিয়ে কন্ঠের ব্যায়াম তথা গান শেখা শুরু করেন। 

বলছি, ৯০’র দশকের তরুণ প্রজন্মের প্রাণ মাতানো গান ‘রঙচটা জিন্সের প্যান্ট পড়া/জলন্ত সিগারেট ঠেঁটে ধরা’সহ অসংখ্য জনপ্রিয় গানের গীতিকার ও সুরকার মিল্টন খন্দকারের কথা। জন্ম ১৯৬৭ সালের ২৫ শে জুন কুষ্টিয়াতে। বাবা ছিলেন একজন পুলিশ অফিসার আর মা গৃহিনী। আট ভাই এক বোনের মধ্যে তিনি ৬ষ্ঠ।

কৈশরে গিয়ে গান আর অভিনয়ের প্রতি এতোটাই ঝুঁকে পড়েন যে, পড়াশোনাটা আর বেশিদূর এগুইনি। এসএসসি পাশ করার পর ১৯৮৪ সালে ঢাকায় এসে মিউজিক কলেজে ভর্তি হন মিল্টন খন্দকার। এরপর সৃষ্টিকর্তাই তাকে গান নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার একটা লাইন মিলিয়ে দেয় বলে জানান এই কথাকবি। থিয়েটারে তার অভিনীত নাটকগুলোর মধ্যে ওরা কদম আলী, ‘হীরক রাজার দেশে’ নাটকে ‘হীরক রাজা’র চরিত্রসহ বেশ কিছু নাটকে অভিনয় করেছিলেন তিনি। মিল্টন খন্দকার অভিনীত থিয়েটার জীবনের প্রথম নাটকের নির্দেশক ছিলেন শেখ মহি উদ্দিন। তখন তার সতীর্থদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় নাট্যকার মাসুম রেজা, নাট্য নির্মাতা আল-মাসুম। সংগীতাঙ্গনে আসার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে কারো অনুপ্রেরণা না থাকলেও নিজের ভেতরের ইচ্ছে শক্তিই তাকে আজকের জায়গায় অবতির্ণ করেছে।

সাংস্কৃতির ক্ষেত্রে গৌরী প্রসন্ন মজুমদারকে তিনি খুবই পছন্দ করতেন পাশাপাশি ভূপেন হাজারিকার গানও শুনতেন। পরে দেশের টানে নিজস্ব গানের প্রতি মমত্বে মুহাম্মদ রফিকুজ্জআমান, গাজী মাযহারুল আনোয়ার, আলম খান, মনিরুজ্জামান, আবু হেনা মুস্তফা কামাল হচ্ছেন তার আদর্শের মানুষ। ছোট থেকেই তাদের গান শুনে শুনে বেড়েচলা। ‘একবার যদি কেউ ভালোবাসতো’, ‘ফুলের কানে ভোমর এসে চুপি চুপি দৌলা দিয়ে যায়’ গানগুলো এখনো তাকে দোলা দেয়। একটা সময় উদীচী’র সাথে যুক্ত হওয়ার ইচ্ছে ছিল কিন্তু থিয়েটারে সক্রিয় থাকায় সেই ইচ্ছে পাত্তা পায়নি। ৮৫ সালে সহিদুল ইসলাম খোকনের ছবিতে গান করে বিচারক-পরিচালক সমিতির সেরা গীতিকার হিসেবে মনোনীত হন। ২০১৩-তে এসে ‘খোদার পরে মা’ ছবিতে পলাশের গাওয়া গান- ‘মা তুমি আমার আগে যেওনা-গো মরে’র জন্য জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত হন। এমনি বিভিন্ন সমময় সম্মানীত হয়েছেন নানাভাবে।

তিনি বলেন, ‘‘এফতেখার হোসেন সোহেল নামে আমাদের একজন মিউজিশিয়ান আছেন। সোহেল ভাই আমাকে প্রথম বললেন যে, আপনিতো গান লেখেন, কয়েকটি গান আমাকে দেন আমি ব্যবস্থা করে দিই। তিনি কিন্তু নিজে সুর করলেন না, দিলেন বদরুল আলম বকুলের কাছে। এরপর দেখলাম গানগুলো নিয়ে মোটামুটি কাজ চলছে। তখন আমি নিজে নিজে আরও কয়েকটি গান লিখে একটি অ্যালবাম করলাম।

মার্স কোম্পানীর প্রযোজনায় সেটি আমার প্রথম অ্যালবাম। বেরিয়েছিল ১৯৮৬তে। তখন হাসান চৌধুরীর একটি অ্যালবাম বের হয়- ‘সেই তুমি’। অ্যালবামটি বাজারজাত করতে করতে ৮৮’র বন্যা চলে আসে। যেজন্য আমাদের অ্যালবামটি প্রকাশ পেলো না। কিন্তু অ্যালবামটি যখন আমরা রিলিজ করলাম। তার দুই বছর পর এটি এতোটাই আলোচিত হয় যে, আমি নিজেও শুনে হতবাক হই। অ্যালবামের অন্যতম গান হলো- ‘সেই তুমি এই আমি, নেইতো আগের মতো,’ ‘তুমি আমি আছি খুব কাছাকাছি, নিশ্বাসে খুঁজে পাই বিশ্বাসের ছোঁয়া।’

সেই যে শুরু, আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।’’ তার লেখা প্রথম গান কোনটি ঠিক মনে না থাকলেও মিল্টন খন্দকারের গান দিয়েই তারকা বনেছেন অনেক শিল্পী। যাদের মধ্যে ডলি শায়ন্তনী(রঙচটা জিন্সের প্যান্ট পড়া/জলন্ত সিগারেট ঠেঁটে ধরা), মনির খান(), পলাশ(খাদার পওে মা) অন্যতম। শুধু শিল্পী নয় মিল্টনের গানের জন্য বহু চলচ্চিত্রও হয়েছে সুপার-ডুপার হিট। তিনি শুধু অন্যদেরকেই তারকাখ্যাতি এনে দেননি নিজেও তারকা হয়েছেন কথার মালায় অগণিত শ্রোতা-ভক্তের প্রাণে জড়িয়ে। 

বললেন, ‘‘একদিন ডলি সায়ন্তনী এলো। তার জন্য আমি গান বানালাম। আমার লেখা ও সুর করা ১৪টি গান নিয়ে ডলি’র প্রথম অ্যালবাম আমাকে রাতারাতি সাঙ্গাতিকভাবে বদলে দেয়। এরপর ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি থেকেও গান করার ডাক পড়লো। এখন পর্যন্ত ১৯৭টি একক অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে।’’

আর মাত্র তিনটি একক অ্যালবাম হলেই দুই’শতম একক অ্যালবামের মাইল ফলক স্পর্শ করবেন অসংখ্য গানের কথা ও সুর¯্রষ্টা মিল্টন খন্দকার। এরপরই তিনি চলচ্চিত্রে গান শুরু করেন বলে জানান। বলেন, ‘‘৮৭/৮৮ সালের দিকে ‘কালো কাফন’ নামের একটি চলচ্চিত্রে আমি গান করি কিন্তু সেটি কালো কাফনেই ডাকা পড়ে যায়, আর দাফন হয়নি। আমাকে যিনি ছবিতে প্রথম সুযোগ দিয়েছিলেন তার নাম মনে নেই। পরে মাসুদ পারভেজ(সোহেল রানা) আমাকে দিয়ে গান গাওয়াতে চাইলেন। তার কথায় আলম খান সাহেব ডেকে নিয়ে ‘ঘেরাও’ ছবির জন্য গান লেখার সুযোগ করে দিলেন আমাকে। এটিই ছিল সিনেমায় রিলিজ পাওয়া আমার লেখা প্রথম গান। সেই থেকে এই দু’জন ব্যাক্তি বিশেষ করে মাসুদ পারভেজ(সোহেল রানা) আমার জীবনের অন্যতম কৃতজ্ঞ পাওয়ার মানুষ হয়ে আছেন।’’ এখানেই শেষ নয় সোহেল রানা নাকি সম্পর্কিতজনদের ডেকে বললেন আপনারা মিল্টনকে দিয়ে গান করান। সেভাবেই পরিচয় ঘটলো সহিদুল ইসলাম খোকনের সাথে।

এই পরিচয়ের সুবাদে তাদের এতোটাই আত্মিক হয়ে ওঠে যে, পরবর্তী সময়ে বেশিরভাগ ভালোগান ও সময় কেটেছে একসাথে-একপথে। তিনি বলেন, ‘‘যদিও জনম জনম ছবির পরিচালনা আমি করেছিলাম কিন্তু পেশাগত জায়গা থেকে সহিদুল ইসলাম খোকনই আমাকে মূলত জায়গা করে দেন।’’ সেই উত্তাল কর্ম¯্রােত তাকে ভাসিয়ে নেয় তুমুল বেগে। একটা সময় গান করার সুবাদে প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী বাপ্পী লাহরীর সাথে পরিচয় ঘটে। তিনি মিল্টন খন্দকারের লেখা ১০টি গান গেয়ে এবং সুর করে অনুপম প্রকাশ থেকে নতুন অ্যালবাম প্রকাশ করেন। এরই মধ্যে আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তায় পৌঁছে যান মিল্টন খন্দকার। প্রবীণদের সাথেই নয়, নবীণদের নিয়েইতো তার যতো ইতিহাস। তাই নতুনদের নিয়ে তার ভাবনার শেষ নেই।

তিনি বলেন, ‘‘আমি যখন নতুন ছিলাম তখনও দেখেছি অনেকেই এড়িয়ে গেছে কিন্তু আমি নতুনদের অনেক বেশি সুযোগ দিয়েছি এবং দিচ্ছি। ডলি সায়ন্তনী, বাদশা বুলবুল, পলাশ, মনির খান, মনি কিশোর আমার গান দিয়েই মূলত সংগীতাঙ্গনে যাত্রা শুরু করে এবং তারকাশিল্পীর খ্যাতিও পায়। ডলির পরপরই মনির খান যখন আসলো তখন-‘ তোমার কোন দোষ নেই আমারইতো দোষ, আমারইতো ভুল’-তো ব্যাপক আলোচিত হয়ে ওঠে।’’ 

মিল্টন খন্দকার বিয়ে করেন ১৯৯৭ সালের ১৭ মার্র্চ। তার সহধর্মিনী লুবনা ইয়াসমিন চৌধুরী টেলিভিশনের তালিকাভূক্ত শিল্পী । দুই কন্যা জাইবা নাহিয়ান খন্দকার শ্রেষ্ঠা ও জারা। মিল্টন খন্দকারের জীবনে গানের সূচনাটা একে বারেই ব্যতিক্রম। তার ভাই নির্বাচনে দাঁড়াতেন, সেই নির্বচনকে ঘিরে মিল্টন খন্দকার প্যারোডী গান লিখতেন। সবাই খুব উৎসাহিতও করতেন। তখন তিনি ভাবলেন- যেহেতু প্যারোডী গান লিখতে পারছেন সুতরাং চাইলে মূলধারার গান লেখাটাও অসম্ভব কিছু নয়। সেই থেকে দৃঢ়চিত্ত্বে গানের সাথে সংসার শুরু।

অথচ, ছোট থেকেই তার স্বপ্ন ছিল একজন বড় অভিনেতা হওয়ার। পরবর্তীতে বিষয়টি জানার পর অনেকে তাকে দিয়ে ছবিতে অভিনয় করিয়েছেন। মিল্টন খন্দকার অভিনীত চলচ্চিত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ‘পালাবি কোথায়’(এই ছবির প্রথম দৃশ্যেই তিনি নন্দিত অভিনেত্রী সূবর্ণা মুস্তাফাকে বিয়ে করতে যাচ্ছেন)।

এছাড়াও অভিনয় করেছেন পরিচালক এ জে মিন্টুর ‘বাপের টাকা’ ছবিতে। একইভাবে চলচ্চিত্র নির্মাতা এম এ আউয়াল অনেকগুলো ছবিতে সুযোগ দিয়েছে মিল্টন খন্দকারকে। সেই সুবাদে এই পর্যন্ত প্রায় ২০-২৫ টি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। কখনো পুলিশ ইন্সপেক্টর, কখনো উকিল বা অন্য কোন চরিত্রে। ১৯৯৭ সালের ১ ডিসেম্বর এই গীতিকবি প্রতিষ্ঠা করেন সংগীত শিখন বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ‘সংগীতিকাব্য চর্চা কেন্দ্র’। তিনি বলেন, ‘‘আমি বিশ্বাস করি গান লেখাটা হয়তো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দিয়ে হয় না। কিন্তু আমি বুঝি। একটি ছেলে অনেক স্বপ্ন দেখে। কিন্তু সে স্বপ্নের কথা যখন লিখতে যাচ্ছে তখন সেটি উপযুক্ত ফর্মেটে লিখতে পারছে না। ওই ফর্মেট দেখিয়ে দেওয়ার কাজটি করছে আমাদের স্কুল।’’ 

আগেরকার গানের মতো এখনকার গানগুলো সর্বস্তরের শ্রোতাদের হৃদয় ছুঁতে না পারার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘একটা সময় বাংলাদেশের মানুষ প্রচুর গান শুনেতো। লতা মঙ্গোশকর, মান্না দে, ভূপেন হাজারিকাদের গান শুনতো। কিন্তু তার ভেতরেই আমরা দেশত্ববোধের একটা ধারাতে আমাদের নিজস্বতা দিয়ে দর্শক-শ্রোতাকে আমাদের গানে ফিরিয়েছি। গানতো প্রাণের আনন্দকে, দুঃখ-বেদনাকে প্রকাশ করে। সেই  দুঃখ-বেদনা প্রকাশের ভাষা যদি না হয়, আমাদের নিজস্বতা যদি না থাকে তাহলে সেটি কোন কালেই স্থায়ী হবে না। নতুন প্রজন্মের যারা কাজ করছে তারা নিশ্চই বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে ভাববে। আমি অনেুরোধ করবো গানে যেন কিঞ্চিত হলেও  বাঙালিয়ানার উপস্থিতি থাকে।

নিজের স্বকীয়তা, অস্তিত্ব যদি নাই থাকে তাহলে ওই গান মানুষের হৃদয় স্পর্শ করবে না। আগে কিন্তু অনেক সাধনা করে শিল্পী হতো। সেটি অবশ্যই দীর্ঘ চর্চার মধ্য দিয়ে। এখনকার বেশিরভাগ শিল্পী চর্চার ধারধারি না, তারা সপটওয়্যারের ধার-ধারছে। ভাবখানা এমন যে, সপটওয়্যারই তাদের শিল্পী বানিয়ে দিবে, ডিস-টিউন কন্ঠে টিউন এনে দিবে। আর আগের শিল্পীরা চর্চার মধ্য দিয়ে ডিস-টিউন কন্ঠে টিউন আনতেন। এখন তার উল্টোটা হচ্ছে। তবে এটাকেও আমি ইতিবাচক হিসেবেই মেনে নেব। কেননা, এখান থেকেও ভালো কিছু আসতে পারে।

সিনেমার গান এবং অ্যালবামের  গানের তারতম্য নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ছবির গান অনেক কিছুই চিন্তা করে গান লিখতে ও গাইতে হয়। লোকেশন, চরিত্র ও পরিবেশসহ সার্বিক বিষয় মাথায় রাখতে হয়। কিন্তু অ্যালবামের ক্ষেত্রে এমনটি নয়। আরেকটি বিষয় হলো এখনকার গানে অনেক বেশি তুই-তুকারী করা হয়, তুই-তুকারী আমরাও কম-বেশি করেছি কিন্তু এতোটা নয়, সব কিছুর মধ্যেই একটা শালীনতা ও দেশত্ববোধ থাকা চাই। আমাদের গ্রামগুলোতে এখনও একজন অপর জনকে যখন ডাকেন- ও ভা.....ই কেমন আছেন? এতে মনে হয় তিনি পল্লীগীতি গাইছেন। কি মধুর বিষয়। আগেরকার সিনেমাগুলো যথেষ্ট ভালো গান-সমৃদ্ধ ছিল। কিন্তু ইদানিংকার সিনেমায় এর খুব একটা ধারাবাহিকতা বা মসৃনতা খুঁজে পাওয়াই যায় না।’’  

ফিল্মের গান কিন্তু র্টীম ওয়ার্ক, আলোচনা করেই করতে হয়। কেননা এখানে গান গল্পের সাথে মিলতেই হবে। নিজের লেখা গানের মধ্যে সব চাইতে পছন্দের গান হচ্ছে- ‘প্রাণ নেই দেহ আছে সভ্যতা যাকে বলে মমী, আমাকে করেছো তাই তুমি’(মনির খানের ১ম অ্যালবাম এর গান)। এছাড়াও ডলি শায়ন্তনীর গাওয়া একটি অ্যালবামের গান ‘আমি সেই সায়ন্তনী, যাকে সোনা-বৌ বলে ডাকতে, তোমার উমস বুকে মুখ গুঁজে চিরদিন চেয়ে চেয়ে থাকতে’ তার ভেতরকে এখনো রাঙ্গায়।’’ এই প্রজন্মের এবং তার সমসাময়িক গীতিকারদের মধ্যে মিল্টন খন্দকারের ভালোলাগে- জুলফিকার, কবির বকুল, অনুরুপ আইচ এবং দেলোয়ার আরজু সরবের লিখনী। তার ভালো লাগা এই সময়ের গানের মধ্যে অন্যতম- ‘আমি তোমার মনের ভেতর একবার ঘুরে আসতে চাই’।

আশা ভোঁসলে’র ‘‘আলো আর আলো দিয়ে তোমার খুশিটি নিয়ে/প্রেমকে নতুন করে জানলাম মনে হয় আজ আমি হাজর সূর্য উঠা দেখলাম’’ গানটি সব সময় তাকে আপ্লুত করে বলে জানিয়েছেন তিনি। অন্য মাধ্যমের মতো সংগীতেও নবীণ-প্রবীণের বোঝাপরার ব্যবধান প্রসঙ্গে মিল্টন খন্দকার বলেন, ‘‘একটা গল্প আছে না- যে, স্যার বললেন- দ্যাখো গোবিন্দ তোমার একপাশে অনেক ‘টাকা-পয়সা’ আরেক পাশে আছে ‘বুদ্ধি’। তুমি কোনটা নেবে? গোবিন্দ বললো- স্যার আমি টাকা নেব। স্যার বললো- কেন, আমি হলেতো ‘বুদ্ধি’ নিতাম। তখন গোবিন্দ বললো- নিবেনই-তো, যার যেটার অভাব। এখন মুশকিল হলো- সব ছাত্র যদি অভাবী হয়, সবাই যদি টাকার দিকে চলে যায় তাহলে প্রবীণদেও অবস্থা হবে চিড়িয়াখানার বাঘের মতো। এখনতো কেউ অবিভাবক মানতেই চায় না। পরম্পরার বিষয়টি কেউ অন্তরে ধারণ করে না।’’

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ছবি দেখে অবসর সময়টা কাটাতে পছন্দ করেন সংগীতপ্রেমীদের এই নয়নমনি। ‘একে-তু জেকেলিয়ে’ এবং বাংলাদেশী চলচ্চিত্র ‘আগুন’ তার পছন্দের তালিকায়। প্রিয় ব্যক্তিত্ব তার বাবা এবং প্রিয় লেখক আশুতোষ মুখোপাধ্যায়। তার লেখা অনেক ভালোলাগা বইয়ের মধ্যে সবচাইতে প্রিয় হচ্ছে- ‘সাত পাকে বাঁধা’, ‘রক্ত আগুন প্রেম’, চাঁদেও কাছাকাছি। পছন্দের খাবার গরুর মাংস হলেও জেদ করে খাওয়া বাদ দিয়েছেন। তিনি নাকি গরু কোরবানী দিতে গিয়ে দেখেন- গরুর ওজন ৭৫ কেজি আর তার ওজন ৯১ কেজি। তার মানে গরু তার চাইও স্লিম।

খুব মজা করেই বললেন মিল্টন খন্দকার। তার প্রিয় রং নীল আর বাবা হওয়ার খবর পাওয়া মূহুর্তটি তার সবচাইতে স্বরণীয় ঘটনা। নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এখন আমার মূল স্বপ্নই হচ্ছে একটি ফিল্ম বানাবো। চলতি বছরেই ছবির শুটিং শুরু করবো। ছবিটি ১৬ই ডিসেম্বর বা আগামী বছরের ২৬শে মার্চ মুক্তি দেওয়ার ইচ্ছা রয়েছে।’’ তিনি বলেন, ‘‘গান কিন্তু একটা বিশাল সমুদ্র, যেখানে শতস্ফূর্তভাবে অবগাহন করতে হয়। হাটু জলে নেমে সমুদ্র জয়ের চিন্তাটা নিছক ভুল। তারা যেন শিখে এবং যাই করে, বুঝে করে।’’ নতুন প্রজন্মের কাছে এটি তার একান্ত অনুরোধ বলে জানান মিল্টন খন্দকার। 

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন