সোমবার, ৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১ , ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫

বিনোদন

‘খুব কষ্ট পেয়েই ইউটিউবার হয়েছি’- তাওহীদ আফ্রিদি

শেখ মনজু  জুলাই ১৫, ২০১৮, ১৫:৫৫:৫৩

102K
  • ‘খুব কষ্ট পেয়েই ইউটিউবার হয়েছি’- তাওহীদ আফ্রিদি

গুগল ট্রেন্ডিংয়ে তাওহীদ আফ্রিদির নাম দেখে অনেকেই চমকে গিয়েছিলেন। ২০১৭ এর কথা সেটা। সে বছর গুগল ট্রেন্ডিং বাংলাদেশের তালিকায় সবচেয়ে বেশি খোঁজ করা হয়েছে যে তারকাদের- তাদের মধ্যে আফ্রিদিই সর্বকনিষ্ঠ। মাশরাফি বিন মুর্তাজা, তাসকিন আহমেদ, শাকিব খান কিংবা মোশাররফ করিম-এর মতো তারকাদের পাশে নিজের নাম দেখে প্রথমে সেটা বিশ্বাসই করেননি টিনেজারদের মধ্যে দারুণ জনপ্রিয় এই ইউটিউবার। ‘কিন্তু পরে যখন বাবাও গুগলে সার্চ করে বললেন যে ঘটনা সত্যি-তখন আমি বিশ্বাস করলাম এবং আই ওয়াজ সো হ্যাপি!’-এভাবেই সেদিনের ঘটনার কথা বলছিলেন এই সময়ের ব্যস্ত ইউটিউবার তাওহীদ আফ্রিদি। ইউটিউবে তার সাবস্ক্রাইবার ৮ লাখের উপরে। প্রতিদিন তার ভিডিও দেখছেন লাখ দর্শক। গত সপ্তাহে আফ্রিদি নিউজজি২৪ এর সঙ্গে  বসেছিলেন আড্ডায়। বলেছেন অনেক কথা- শেখ মনজু

নিউজজি২৪- ইউটিউবে তৌহিদ আফ্রিদির শুরুটা কীভাবে?

তাওহীদ আফ্রিদিঃ একটা কষ্ট থেকে আমার ইউটিউবার হওয়া। ইউটিউব শুরু করেছি আমি একটা কষ্ট পেয়ে। কেউ একজন, আমি নাম বলতে চাই না। তবে এখনকার জনপ্রিয় ইউটিউবার। সে আমাকে নিয়ে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিল।

নিউজজি২৪- স্ট্যাটাসটা কী ছিল?

আফ্রিদিঃ স্ট্যাটাসটা ছিল এমন যে তৌহিদ আফ্রিদি এই সেই, হেন তেন, বাবার এই আছে সেই-আমি কাউকে ভয় পাই না... ইত্যাদি ইত্যাদি। ব্যাপারটা ধরেন, আপনি আমার শোতে এসেছেন, একটা শোয়ের পেমেন্ট করেছি, পরেরটা হাফ করা আছে, বাকিটা হয়ত দিতে একটু দেরি হচ্ছে। কিন্তু দিয়ে দিব। সেই সময় তার হয়ে কেউ একজন আমাকে কল দিয়েছে, আমি তখন আমার আব্বুর সামনে বসা। মিটিং চলছে। আমি ফোনটা ধরে বললাম- ভাই আমি আমার বাবার সামনে। একটু পরে কথা বলছি। এই একটা ছোট্ট কথার জন্য যে এতকিছু হয়ে যাবে আমি ভাবতেও পারিনি। এত্ত বড় একটা স্ট্যাটাস দিয়ে দিলো। সেখানে আমাকে তার ফ্যানরা যাচ্ছে তাই ভাবে কমেন্ট করতে লাগল। সবদিক থেকে দেখি আমাকে গালাগালি করা শুরু করেছে তার লোকজন। আমার এখনো মনে আছে আমি কত রাত কেঁদেছি। জাস্ট একটা ঘটনা- কিন্তু আমার জীবনটা বদলে গেছে। কষ্ট পেয়েছি অনেক। জীবনেও ভুলবা না সেটা। আমাকে কেউ যদি মারতও, আমার বাবা মা বা যে কেউ যদি আমাকে মারত, তাও আমি এত কষ্ট পেতাম না, যেই কষ্টটা আমি সেদিন পেয়েছি!

সো অনেক কষ্ট পেয়েই আমি আজকে ইউটিউবার হয়েছি।

নিউজজি২৪- কষ্ট থেকে তো তাহলে ভালো কিছুই হলো। ওকে প্রথম ভিডিও কী ছিল?

 আফ্রিদিঃ আমার প্রথম ভিডিও ছিল ‘বাংলাদেশি স্মার্ট গাইজ’। জায়েদ খান ভাইকে পচাই আমি ওখানে। একটু দুষ্টুমি করতে চেয়েছিলাম। দুষ্টুমি করেই করা। কিন্তু ওটা যে হিট খেয়ে যাবে বুঝি নাই। এরপর সেকেন্ড ভিডিওটা আমি গ্লোব সফট ড্রিঙ্ক খেয়ে শুটিং করেছিলাম। যে কারণে আমার ঠোঁটগুলো লাল দেখাচ্ছিল। মানুষ ভেবেছিল যে আমি লিপস্টিক মেখে শুটিং করেছি- হিউজ পচানি খেলাম ভিডিওর কমেন্টে। কিন্তু আমি পজিটিভলি নিলাম যে আই হ্যাভ হেটারস! তখন আমি ক্রিটিসাইজ নেয়া শিখছি। আমার মনে হয় আই’ম ওয়ান অদ দ্য ইউটিউবারস যার কোনো ফ্যান ছিল না, হেটারস ছিল। এরপর ৪/৫টা ভিডিও দিলাম। ভাবলাম ধুর আমি আর ইউটিউব করব না। মানুষ আমাকে গালাগালি করে।

ততদিনে ৫ হাজার সাবস্ক্রাইবার হয়ে গেছে আমার। তখন ওয়ার্ল্ড ট্যুরে বের হই আমি। তখন দেখি প্লেনে মানুষ চিনতে পারছে আমাকে, নিউইয়র্কে মানুষ চিনতে পারছে- আমিতো অবাক! মাত্র ৫/৬ হাজার সাবস্ক্রাইব হয়েই এত মানুষ চিনতেছে!

উৎসাহ পেয়ে গেলাম। ঢাকায় এসেই আমি ‘বাংলাদেশি ৪২০’ নামে একটি ভিডিও বের করি-যেটা ওয়ান অব মাই হিটেস্ট ভিডিওস। আমার ইউটিউব ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট বলতে পারেন ওটাকে। ১ মিলিয়ন ভিউজ হয়ে গেছে এখন সেটার। ওটা রিলিজ দেয়ার পর ২/১ দিনেই ১৫ হাজার সাবস্ক্রাইবার হয়ে গেছে।

নিউজজি২৪- এরপর পরই কি ভ্লগ করা শুরু?

আফ্রিদিঃ হ্যাঁ তা বলতে পারেন। বাইরের কিছু ভ্লগ দেখে আমিও শুরু করলাম। তখন দেখি ১ হাজার লাইক আর ১ হাজার ডিসলাইক। ভাবলাম বাহ! খারাপ কি! এর কিছুদিন পর আরেকটা ভ্লগ দিলাম। ওটাও পছন্দ করল মানুষ। বাংলাদেশের মার্কেটে ভ্লগটা আমিই স্ট্যাবলিশ করেছি-এই ক্রেডিটটা আমি নেব- আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া।

নিউজজি২৪- গ্রেট। আফ্রিদির একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড কী?

আফ্রিদিঃ আমি এখন মিডিয়া অ্যান্ড এমসিআর মানে মেইন কন্ট্রোলিং রুম নিয়ে পড়াশুনা করব। চায়নার একটি ইউনিভারসিটিতে  চলে যাব। মিডিয়ার উপর পিএইচডি নেয়ার ইচ্ছে আছে আমার। এটা আমার স্বপ্ন, শখ দুটোই। আরেকটা স্বপ্নও আছে আমার...  

নিউজজি২৪- কী সেটা?

আফ্রিদিঃ মানুষের জন্য কিছু করা। আমি মাই টিভিতে এখন প্রোগ্রাম ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করছি। ওখান থেকে যা বেতন পাই আমি, তার ৪৫% এবং ইউটিউব থেকে যা আর্ন করি, সেটা দিয়ে চ্যারিটি করি।

নিউজজি২৪- বাহ। কোথায় সেটা?

আফ্রিদিঃ মাঝখানে উত্তরার একটা স্কুলে দিতাম। এখন ‘মাই হেলথ ফাউন্ডেশন’ নামের একটা চ্যারিটি ফাউন্ডেশন আমরা নিজেরাই করেছি। ইতিমধ্যে এই ফাউন্ডেশন থেকে বরিশালে আমাদের গ্রামের বাড়ির ওদিকে বৃদ্ধাশ্রম এবং হসপিটাল করার কাজ শুরু হয়েছে। আশা করছি সামনেই স্কুল এবং কলেজও করব। ‘মাই হেলথ অ্যান্ড মেডিক্যাল কলেজ’ নামের সেই হাসপাতালে সবাইকে ফ্রি চিকিৎসাসেবা দেয়া হবে। আমার প্ল্যান হচ্ছে বেঁচে থাকার জন্য যতটুকু দরকার, ততটুকু রেখে বাকী সবটুকু আমি চ্যারিটিতে দিয়ে দিব। আল্লাহ আমাকে যতটুকু দিচ্ছে, আমি সেখান থেকেই যথাসাধ্য চেষ্টা করছি মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসতে।

 

 নিউজজি২৪

ছবিঃ ফারহান আহমেদ রাফাত 

 

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন