রবিবার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১ , ৪ জিলকদ ১৪৪৫

বিনোদন
  >
ব্যান্ড মিউজিক

ভেঙে গেছে ‘এলআরবি’, দুই ভাগে বিভক্ত সদস্যরা

কামরুল ইসলাম ২২ জুন , ২০১৯, ১৬:২২:৪৮

72K
  • ছবি: সংগৃহীত

দেশের ব্যান্ড সঙ্গীতের অন্যতম কালজয়ী ও জনপ্রিয় ব্যান্ডদল ‘এলআরবি’ ভেঙে গেছে। আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুর পর ভোকাল ও গিটারিস্ট হিসেবে ব্যান্ডটিতে যোগ দেন বালাম। তিনি ইতোমধ্যে ব্যান্ড থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। শুধু তাই নয়, এলআরবি’র সদস্যরাও এখন দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে আছেন। গত ৬-৭ মাস ধরেই এই ভাঙন একটু একটু করে গাঢ় হয়েছে। এবং শেষ পর্যন্ত এর অন্যতম সদস্য স্বপন ও রোমেল আলাদাভাবে শো করাও শুরু করেছেন। সুতরাং বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এলআরবি ভেঙে গেছে।

২১ জুন, শুক্রবার এলআরবি ব্যানারে একটি কনসার্ট করেন স্বপন ও রোমেল। সেখানে দেখা যায়নি ব্যান্ডের অন্য সদস্যদের। এই খটকা থেকেই যোগাযোগ করা হয় ব্যান্ডটির সদস্যদের সঙ্গে। নিউজজি’র সঙ্গে একান্ত আলাপে তারা জানিয়েছেন অনেক কিছুই।

এলআরবি’র প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য সাইদুল হাসান স্বপন। দীর্ঘ তিন দশকের বেশি সময় ধরে তিনি আইয়ুব বাচ্চুর সঙ্গে গান করেছেন। তিনি নিউজজিকে বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা বসের (আইয়ুব বাচ্চু) অসম্মানটা মেনে নিতে পারিনি। আমি বাচ্চু ভাইয়ের সঙ্গে তো সারাটা জীবনই কাটালাম। রোমেলও অনেকটা সময় ধরেই ছিল আমাদের সঙ্গে। কিন্তু সম্প্রতি দেখলাম বাকি সদস্যরা কোনো ব্যানারে বসের ছবি বা নাম খুব একটা পছন্দ করছে না। তারা সব সিদ্ধান্ত একা একাই নিয়ে ফেলছে। মানে আমাদের সাথে মতের কোনো মিলই হচ্ছিল না। এরপরও আমরা চুপচাপ ছিলাম। ব্যান্ড ধরে রাখার স্বার্থে কিছুই বলিনি। তারাই সব করছে। প্র্যাক্টিসের তারিখ ঠিক করল। আমরা অপেক্ষা করে বসে আছি। এখনও পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগই করেনি।

বাধ্য হয়েই আলাদাভাবে শো করছেন উল্লেখ করে স্বপন বলেন, বাচ্চু ভাই নিজেই বলতেন, ‘শো মাস্ট গো অন’। আমরা সেই কথা ধরেই শো করছি। উনি নিজেও এটা করেই খেতেন, আমরা উনার কাছ থেকে এটাই শিখেছি। আমাদেরও সংসার চালাতে হয়। গত ৮ মাস ধরেই তো বসে আছি। কিন্তু উনারা (বাকি সদস্য) সাউন্ডের ব্যবসা করছেন, অন্যান্য ব্যান্ডের সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং করছেন। ব্যান্ডের শো আসলে ম্যানেজার বলে দিচ্ছেন, ‘এলআরবি’ আপসেট আছে, এখন শো করবে না!’ তো বাধ্য হয়েই আমাকে আর রোমেলকে শো’তে নামতে হয়েছে এবং গতকাল একটি শো করলাম। এটা অবশ্য অনেক দিন থেকেই ঝুলে ছিল। তাই করে দিলাম।

স্বপন আরও বলেন, আমি এখন এলআরবি’র একমাত্র প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। বাকি যারা ছিলেন, তারা চলে গেছেন। আমি কখনো বাচ্চু ভাইয়ের অসম্মান হতে দেব না। আমি ব্যান্ড চালিয়ে যাব, গান করব। সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছি। এখনও চূড়ান্তভাবে লাইনআপ ঠিক করিনি। বাচ্চু ভাইয়ের গান যারা ভালো গায়, তাদের কয়েকজনকে দিয়ে চেষ্টা করেছি। দেখা যাক কী হয়।

এলআরবি নামেই ব্যান্ড পরিচালনা করার ব্যাপারে স্বপন বলেন, ‘এলআরবি’ আমার সোল প্রোপার্টি। সুতরাং অবশ্যই এই নামে আমি শো করব। বাচ্চু ভাই ব্যান্ডটাকে আমার হাতে ছেড়ে দিয়ে গেছেন। আমি সবাইকে নিয়ে চলার চেষ্টা করেছি। এখন তারা যদি থাকতে না চায়, তাহলে তো আমার একাই চলতে হবে। বস্‌ তো এজন্যই গাইতেন, ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে’।

একটি ঘটনার ইঙ্গিত করে স্বপন বলেন, একটি জঘন্য ঘটনা ঘটিয়েছে তারা। এখনই সেটার বিস্তারিত বলতে চাচ্ছি না। তবে তারা যদি বাধ্য করে, তাহলে আমি ঘটনাটা প্রকাশ্যে নিয়ে আসব। এত দিনের বিশ্বাস তারা মুহূর্তের মধ্যে ভেঙে দিতে পারল, এটা দেখে তো আমি অবাক হয়েছি।

‘এলআরবি’র বর্তমান অবস্থা নিয়ে আইয়ুব বাচ্চুর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন স্বপন। তিনি বলেন, আমি তাজওয়ারের (আইয়ুব বাচ্চুর ছেলে) সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। সে এখনও সাড়া দেয়নি। সাড়া দিলে বিষয়টি নিয়ে কথা বলব।

 

 

এদিকে ব্যান্ডের অন্যদিকে থাকা সদস্য আব্দুল্লাহ আল মাসুদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয় নিউজজি’র পক্ষ থেকে। স্বপন ও রোমেলের আলাদাভাবে শো করার বিষয়টি তিনি জানেন না উল্লেখ করে বলেন, এই বিষয়টি আমি আপনার কাছ থেকে জানলাম। আমাদের অন্যদের সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত জেনে তারপর ব্যাপারটি নিয়ে কথা বলব।

‘এলআরবি’র ম্যানেজার শামীমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তারা কেন আলাদাভাবে শো করছে, সেটা আমরা জানি না। আর যোগাযোগের ব্যাপারে যদি বলি, আসলে কাউকে ডেকে ডেকে তো ব্যান্ড করা যায় না। এটা তাদেরও ব্যান্ড। তারা নিজে থেকে আসবে, প্র্যাক্টিস করবে। এখন তারা যদি না আসে, আলাদাভাবে শো করে, আমাদের কী বলার আছে।

প্রসঙ্গত, ১৯৯১ সালে আইয়ুব বাচ্চুর হাত ধরে যাত্রা শুরু করে লাভ রানস ব্লাইন্ড বা এলআরবি। সেই সময় দলের সদস্য ছিলেন এস আই টুটুল, সাইদুল হাসান স্বপন ও হাবিব আনোয়ার জয়।

গত বছরের ১৮ অক্টোবর আইয়ুব বাচ্চু মারা যাওয়ার পর ব্যান্ডটির কার্যক্রম নিয়ে সংশয় তৈরি হয়। এরপর নানা আলোচনা-সমালোচনার মধ্য দিয়ে ব্যান্ডে যোগ দেন বালাম। সবাই আশার জাল বুনেছিল যে, আবারও প্রিয় ব্যান্ড দলটি দাপিয়ে বেড়াবে গানের মঞ্চ। কিন্তু সেই আশা যেন অধরাই থেকে গেল।

 

 

 

নিউজজি/কেআই

পাঠকের মন্তব্য

লগইন করুন

ইউজার নেম / ইমেইল
পাসওয়ার্ড
নতুন একাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে এখানে ক্লিক করুন